খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৪ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ডলার লবিস্ট নিয়োগ করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়, আ. লীগের পক্ষে বাংলাদেশের পরিস্থিতি মার্কিন নীতি নির্ধারকদের জানাবেন তারা
  নেপাল থেকে ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবারাহের চুক্তি
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০২২

‘হিট অ্যালার্ট কি বুঝি না, পেটের খিদের জন্য কাজ করতে হয়’

আয়শা আক্তার জ্যোতি

‘হিট অ্যালার্ট কি বুঝি না, পেটের খিদের জন্য কাজ করতে হয় । রোদের মধ্যে দাড়িয়ে ডাব বিক্রি করি। তাতে কোনো রকম দিন চলে যায় । এলার্জি থেকে ঘা হয়েছে, সেটার দিকে তাকালে আমার চলে না। প্রতিদিন রূপসার চৌরাস্তায় গিয়ে পাইকারি কিনে ইজিবাইক রিজার্ভ করে সোনাডাঙ্গা এলাকায় এনে ডাব বিক্রি করি।’

রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর সোনাডাঙ্গা গাজী মেডিকেলের সামনের মোড়ে প্রখর রোদে দাড়িয়ে এভাবেই বলছিলেন ডাব বিক্রেতা পারভীন খাতুন।

তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও সংসার সামলাতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে পারভীন খাতুনের। ছোট ছোট চার সন্তান রেখে বছর দুই আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তার স্বামী। স্বামীর মৃত্যু পর থেকে সন্তানদের নিয়ে তার বৃদ্ধ মা-বাবার কাছে থাকেন। হাল ধরতে হয়েছে সংসারের।

শুধু পারভীনই নয়, তীব্র দাবদাহে সংসার পরিচালনার জন্য তীব্র গরম, ঝড় বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হতে হয় শ্রমজীবী মানুষের।

নগরীর গোবরচাকা একলায় ছায়ার নিচে যাত্রীর অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা রিকশা চালক মো. জালাল (৬৮) জানান, আমার পরিবারের আমি আর আমার দুই স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। এতোদিন নিকে একবেলা রিকশা চালাতাম আর একবেলা রিকশা ভাড়া দিয়ে দিন চলে যেতো। কিন্তু ঈদের আগে আমার রিকশা চুরি হয়ে যায়। ফলে পরের রিকশা ভাড়া নিয়ে সারাদিনই চালাতে হয়। ভাড়ার টাকা আর সংসারের খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয়। নিজের ভিটেমাটি বলতে কিছুই নেই, ভাড়া বাড়িতে থাকি। কাজ না করলে ঘরে চুলা জ্বলে না। তাই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমাকে কাজে বের হতে হয়। পেটের খিদের কাছে সব কষ্টও হার মেনে যায়।

এদিন দুপুুর তিনটা সূয একটু হেললেও তাপমাত্র বিন্দু মাত্র কমেনি। ঠিক তখন ময়লার ভাগাড়ে পচনশীল আর অপনচশীল ময়লা আলাদা করতে দেখা যায় ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধ আবুল হোসেনকে। তিনি বলেন, একটু পরেই সিটি করপোরেশনের গাড়ি আসবে। গরমে দূর্গন্ধ বেশি ছড়ায়। ফলে দ্রুত ময়লা-আবর্জনা লোড করতে হবে। সবাই তো এই কাজ করতে চাই না। তাই আমরা যারা এই কাজ করি তাদের আর দূর্গন্ধ বা রোদ কিছুই গায়ে বাধে না। এই কাজের মাধ্যমে তো আমার সংসার চলে।

রোদে মধ্যে রাস্তায় ঘুরে পাইকগাছা-কয়রা, পাইকগাছা-কয়রা বলে চেঁচাতে থাকা গাড়ির হেলপার শেখ কালাম বলেন, আমি হেলাপারি করি। লোক ডেকে গাড়িতে তুলি। তারপর লোকদের নিধারিত সময়ের মধ্যে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। স্ত্রী ছেলে আর বিবাহিত মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। ছেলে চাকরির করলেও আরো একটু ভালোভাবে চলাচল জন্য কাজ করি। তাপমাত্রা কত তা আমি ঠিক জানি না, কিন্তু গরম বেশি লাগছে। পানি খাচ্ছি, কাজ করছি-এইভাবে দিন চলে যাচ্ছে।

বয়রা পূজোখোলায় কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে থাকা ৩০ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করেন। তারা বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করতে দৈহিক শক্তির বেশি প্রয়োজন। কাজের পরে আর শরীরে বল পাই না।

এই গরমে তাদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না এই বিষয়ে ঠিকাদার পলাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিশ্রামের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্যালাইন, ঠান্ডা পানি এবং জুসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই না, তাদের জন্য ফ্যানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা অসুস্থ হয়ে না পড়ে।

শিববাড়ি থেকে রূপসায় ইজিবাইকে যাত্রী নিয়ে যাওয়া সগির হাওলাদার বলেন, আমি তো আর সরকারি চাকরি করি না যে এক-দুই দিন ছুটি নিব। স্ত্রী, দুই সন্তান আর বাবা-মাকে নিয়ে সংসার চালাতে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে হিমসিম খেতে হয়। তার উপর দ্রব্য-মূল্যের যে দাম তাতে আর বিশ্রাম নেওয়ার কথাটা মাথায় আসে না। সারাদিনের কষ্ট শেষে ঘরে ফিরে পরিবারের হাসিমুখ দেখে পরের দিন আবার কাজে বের হতে হয়। 

৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সবজি বিক্রি করেন ৭২ বছর বয়সী তালেব। তিনি বলেন, আমি সবজি বিক্রি করে খাই। আমার স্ত্রী এক মেয়ে এক ছেলে নিয়ে আমার পরিবার। ছেলেকে মানুষ করেছি বিয়ে হয়েছে, সে এখন আর আমাদের দেখে না। আমার মেয়েটা অনার্স পড়ে। আমাদের ৩ জনের সংসার চালাতেই আর মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাইতে এখনো আমাকে কাজ করতে হয়। সূর্য ওঠে ডুবে যায়, রোদে বসে, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করি। এখন সব সহে যায়, তাপমাত্রা বুঝি না।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রায রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এর আগের ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। 

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, আজ খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ইশ্বরদীতে ৪২ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ৪০.৮ ডিগ্রি, মোংলা ৩৯.৭ ডিগ্রি, সাতক্ষীরা ৩৯.৫ ডিগ্রি এবং খুলনায় ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দু-একদিন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছুটা কমতে পারে। তবে এই মাসজুড়ে তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!