খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  একদিনে ডেঙ্গুতে আরও ৮ মৃত্যু, শনাক্ত ১১০৮
  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকচাপায় শিশুসহ নিহত ৩
  বুধবার থেকে ডিমের নতুন দাম কার্যকর হবে : ভোক্তা ডিজি
  দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হবে সরকার : শ্রম উপদেষ্টা
  এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ; পাশের হার ৭৭.৭৮

হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ডুমুরিয়ায় ১৪টি ইট ভাটার কার্যক্রম চলমান

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া

মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী তীরের সরকারি জায়গায় স্থাপিত ১৪টি ইটভাটার সকল কার্যক্রম মৌসুম শুরুর সাথে সাথে আবারও শুরু হয়েছে। বর্তমানে ভাটা গুলোতে ইট তৈরি ও পুড়ানো হচ্ছে। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানের নামে নানা তালবাহানা করেছে। যা জনমনে হাস্যকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এজন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় খুলনা জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলবও করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও ভাটার কার্যক্রম উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে।

জানা গেছে, হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনে অপারগতা প্রকাশ করায় আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ করা হয়। এজন্য গত ২৫ অক্টোবর আদালত একটি রুল জারি করেন। এরপরও ইটভাটা উচ্ছেদ না করায় এইচআরপিবির পক্ষে বিবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত হাজিরার আবেদন দাখিল করে। শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ও ডুমুরিয়ার ইউএনও শরীফ আসিফ রহমানকে গত ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট তলব করেন।

তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রতিপালনের লক্ষ্যে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া এলাকায় অবস্থিত শাহাজান জমাদ্দারের মালিকানাধীন নুরজাহান ব্রিক্স-২ ইট ভাটা লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং নদীর মাটি কেঁটে ইট প্রস্তুুত করার অপরাধে ২ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য্য অনদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ, খর্ণিয়া ইউনিয়নে সোহরাব হোসেনের মালিকানাধীন এ,এফ,এম,ব্রিক্স লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডাদেশ, মোঃ ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের মালিকানাধীন আল্লাহর দান ব্রিক্সকে ১ লাখ টাকা এবং মশিউর রহমানের মালিকানাধীন মেরী ব্রিক্সকে ১ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য্য করে আদায় করা হয়।

এছাড়া উল্লেখিত ইটভাটাসহ গাজী এজাজ আহম্মেদের মালিকানাধীন সেতু ব্রিক্স, মোঃ ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এস,বি ব্রিক্স ও মোঃ সালেহ আখতার মাহির মালিকানাধীন কে,বি-২ ব্রিক্সসহ নদীর জায়গায় স্থাপিত সকল ইটভাটার অবৈধ স্থাপনা, স্তুুপকৃত ইট ও মাটি পরবর্তী ৩দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু উল্লেখিত ভাটা কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশ অম্যান করে সরকারি জায়গা থেকে ইট, মাটি ও স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় আবারও অভিযান পরিচালনা করে প্রস্তুুতকৃত কাঁচা ইটে ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে ট্রাকের তলায় পিষ্ট করা হয়। সর্বশেষ খর্ণিয়ার রানাই পাল পাড়া এলাকায় ভদ্রা নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে ওঠা ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এবং সোহরাব হোসেন সানার ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা এএফএমবি ব্রিক্স এ অভিযান পরিচালনা করে স্কেভেটর দিয়ে ইটভাটার চিমনীসহ অন্যান্য স্হাপনা ভেঙ্গে দেওয়ার কাজ শুরু করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান। তবে অদৃশ্য কারণে সে অভিযান তৎক্ষনাৎ বন্ধ হয়ে যায়।

ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া,খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভদ্রা ও হরি নদীর তীরের চর ভরাটিয়া জমি এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জনস্বার্থে সংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ রীট পিটিশন দায়ের করেন। এক পর্যায়ে গত বছর ১৪ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট রীট পিটিশনটি শুনানীয়ান্তে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে ১৪টি ইটভাটার মধ্যে সরকারি জায়গায় স্থাপিত সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জায়গা অবমুক্ত করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মোঃ মজিবর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্যার বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।

উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া ইট ভাটা গুলো হচ্ছে-ডুমুরিয়া কুলবাড়িয়া, বরাতিয়া ও ভদ্রাদিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর তীরবর্তী ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এসবি ব্রিকস, একই মৌজা ও নদীর তীরে অবস্থিত নারায়ণ চন্দ্র চন্দের মালিকানাধীন কেপিবি ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ও খর্ণিয়া মৌজার ভদ্রা তীরের এজাজ আহমেদের সেতু-১ ব্রিকস, শাহজাহান জমাদ্দারের নূরজাহান-১ ব্রিকস, সালেহ আকতার মাহির কে.বি-২ ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ভদ্রা নদী তীরে শাহজাহান জমাদ্দারের শান ব্রিকস, রানাই মৌজার ভদ্রা নদীর তীরে মোঃ সোবাহান সানার এএফএম ব্রিকস, রানাই মৌজার হরি নদী তীরের জাহিদুল ইসলামের কেবি ব্রিকস, ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের আল-মদিনা ব্রিকস, মশিউর রহমানের মেরি ব্রিকস, আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের জেবি ব্রিকস-১, আমিনুর রশিদের লুইন ব্রিকস, চহেড়া মৌজার হরি নদী তীরে গাজী আব্দুল হকের সেতু-৪ ব্রিকস এবং রুদাঘরা মৌজার হরি নদী তীরের গাজী ইমরানুল করিরের টিএমবি ব্রিকস। এর আগে হাইকোর্ট রুল জারি করে হরি ও ভদ্রা নদীর সীমানায় সিএস, আরএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে দখলদারদের তালিকাসহ ৯০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খুলনা পওর বিভাগ-১, পাউবো খুলনাকে আহবায়ক এবং সার্ভেয়ার, খুলনা পওর বিভাগ-১, ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে যৌথভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত।নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসন গত বছর অক্টোবর মাসে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে। গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি রীট সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্হানীয় উপজেলা প্রশাসন হরি ও ভদ্রা নদীর তীরবর্তি ১৪টি ইটভাটা উচ্ছেদের কার্যক্রম শুরু করে ৪/৫ টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে কিছু আর্থিক জরিমানা ব্যতিত সরকারি জায়গা উদ্ধারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। যার ফলে বর্তমান মৌসুম অর্থাৎ চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ওই সকল ইটভাটা গুলো তাদের দখলকৃত সরকারি জায়গায় মাটি স্তুুপ করা, ইট কাটা ও শুকানো, ভাটা শ্রমিকদের জন্যে আবাসন তৈরী করাসহ তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। বর্তমানে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

এদিকে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া রীটে ১৪টি ইটভাটা ছাড়াও উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া-কুলবাড়িয়া মৌজার তেলিগাতি নদীর পাড়ে গড়ে উঠা ডুমুরিয়া সদরের আজিজুর রহমান মোড়লের মালিকানাধীন আল্লাহর দান ব্রিকস এবং খুলনার খালিশপুর এলাকার জনৈক আঃ হাই বাহারের মালিকানাধীন মেসার্স বাহার ব্রিক্সস,ঘ্যাংরাইল নদী দখল করে আলুকদিয়া মৌজায় বয়ারসিং গ্রামের পুষ্পক সরদারের মালিকানাধীন এমএসবি ব্রিক্স, বয়ারসিং মৌজায় ওই এলাকার রঞ্জন সরদারের মালিকানাধীন বিবিবি ব্রিক্স এবং ঘ্যাংরাইল নদী দখল করে গড়ে উঠা তালা উপজেলার শুভাশুনি গ্রামের আমিন উদ্দীনের মালিকানাধীন রিপা ব্রিক্স সরকারি আইন বিধি উপেক্ষা করে ইটভাটা গুলো হাইকোর্টের রীটের বহির্ভূত থাকায় মালিকগন বহাল তবিয়াতে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নদীর তীরবর্তী অবৈধভাবে দখলে রাখা সরকারি জায়গা অবমুক্ত করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!