খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

স্টেশন রোড

আয়শা আক্তার জ্যোতি

দিন-তারিখটি ঠিক মনে নেই। তবে এইটুকু মন আছে বৃষ্টির দিনে ফাঁকা রাস্তায় যখন আমি একা একটা সিএনজিতে রেলস্টেশনে যাওয়ার তাড়ায় ছিলাম ; ঠিক তখন তুমি ছাতা মাথায় হাত বাড়িয়ে আমার সিএনজিকে থামিয়ে বললে স্টেশন যাবেন? তখন তোমার মায়াবী কন্ঠ শুনে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ছাতার তোমার মুখ ঢাকা কিন্তু দেখতে পাাই বৃষ্টিতে ভেজা অপরূপ সুন্দর নূপুর পরা একজোড়া পা। তারপর তুমি যখন পাশে বসলে তখন কেমন জানি অন্য রকম এক শিহরন বয়ে গেলো। তাই সব ধরণের ভনিত বাদ দিয়ে শুরু করলাম ৷ তোমার হাতে থাকা ডাইরির কয়েকটা লাইন দিয়ে।

শুভ : এটা কার লেখা??
আমি : এটা রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাস থেকে নেওয়া।

কিছুক্ষণ পর

শুভ : এটাও কি রবীন্দ্রনাথ?
আমি : না, এটা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাদম্বিনীর সুইসাইড নোট এর কিছু অংশ।
শুভ : আপনি কি পড়তে ভালোবাসেন?
আমি : একদম না, আমি লিখতে ভালোবাসি। লেখার জন্য ঐ যেটুকু পড়তে হয় আর কি ততটুকুই।
শুভ : আচ্ছা! তাহলে কি আমি লেখিকার সাথে কথা বলছি।
আমি : ব্যাপারটা মোটেও সে রকম নয়। ঐ টুকটাক লিখি আর কি। প্রতি সপ্তাহে আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এই তো।
শুভ : ও বাবা রে। আপনি তো অদ্ভুত। নিজেকে গোপন করে রাখছেন। আচ্ছা প্রতি রবিবার সাহিত্যের পাতায় আপনার লেখাটা আসে। যেমন ধরুন ডাইরির শেষ পাতা।
আমি: হ্যাঁ।
শুভ : আপনিই তাহলে তিনি, যার লেখা পড়ার জন্য আমি প্রতি সপ্তাহে অপেক্ষা করে থাকি।
আমি : এটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না।
শুভ : মোটেও না। আমি সত্যি বলছি। আপনার প্রতিটা গল্প আমার হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। আমার নাম টায় তো আপনাকে বলা হলো না। আমি শুভ। ছোটোখাটো একটা চাকরি করি। মা ছেলে সংসার চলে যায় ভালো ভাবে। আপনি তো মেঘলা আর বাকিটা,
আমি : হুম! মেঘলা আমি। বাবা-মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে থাকি। এইবার ফাইনাল ইয়ার।ভাই পড়াশোনায় বেশ ভালো, ও কলেজে পড়ে। আর বাবা সামান্য স্কুল মাস্টার। এই তো,,,
শুভ : আপনার নাম মেঘলা হলেও কিন্তু মুখে কালো মেঘের আড়ালে হাসির ছোপটা লেগে থাকে।
( মেঘলা একটু হাসে ) হুম হাসলে কিন্তু আপনাকে মন্দ লাগে না। কালো মেঘ টাকে মাঝে মধ্যে একটু সরাতে পারেন।
আমি : আপনার সাথে পরিচিত হয়ে বেশ লাগলো।
শুভ : বলছেন,,, ,
আমি : হুম
শুভ : সবাই বলে কল্পনা মানুষের সাথে নাকি ভালো সময় কাটে। এখন কিন্তু সত্যি মনে হচ্ছে।
আমি : আমার গন্তব্যে চলে এসেছি,, ভালো থাকবেন।
শুভ : চলে যাচ্ছেন, আপনি ও ভালো থাকবেন ।

(এর পর আর দেখা হয়নি শুভ আর মেঘলার)

তিন মাস পরে মেঘলার একটা চিঠি আসে চিঠি টা লিখেছে শুভ ।

প্রিয় মেঘলা,

আশা করি ভালো আছেন,। আমিও ভালো আছি। চিনতে পেরেছেন? ঐ যে সেদিন সিএনজিতে । হ্যাঁ! আমি সেই অধম,, সেদিন যদি আপনার ফোন নাম্বারটা নিতাম তাহলে বোধ হয় দিনের পর দিন পত্রিকা অফিসে গিয়ে এতো কষ্ট করে আপনার ঠিকানাটা নিতে হতো না। আপনার প্রতি অজানা একটা ভালো লাগা আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু আপনার সাথে দেখা হওয়ার পরে এবং কথা বলার পরে সেই ভালো লাগাটা যেনো,,,,,,,

ও শুনুন প্রমোশন হয়েছে আমার, তাই মাইনেও একটু বেড়েছে। মা বেশ কয়দিন ধরে বলছে (মা : বাবু আমার আর একা একা থাকতে ভালো লাগে না। তোর মাইনে বেড়েছে এখনো সংসারে লোক বাড়াতে হবে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না)। মেঘলা আপনি যদি চান আমার মাকে পাঠাতে পারি আপনাদের বাড়িতে। আমি যে মেঘলার মুখের কালো মেঘ সরিয়ে সোনালী সূর্যের আভা ছড়াতে চাই সারা জীবন।

যদি এই শুভকে আপনার মুখে সূর্যের আলো ফেলতে দেন তাহলে চিঠির উত্তরটা দিবেন আশা করি।

                                                                                                                                          ইতি
আপনার চিঠি উত্তরের আশায় থাকা শুভ।

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!