সোরিয়াসিস ত্বকের একটি প্রদাহজনিত নিয়ন্ত্রণযোগ্য অসংক্রামক সমস্যা, কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সারা জীবন ধরেই এ রোগ মোকাবিলা করে যেতে হয়। কখনো কখনো সোরিয়াসিসে ত্বকের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয় অস্থিসন্ধির সমস্যাও। সোরিয়াসিস অনেকসময়ই বংশগতভাবে জেনেটিক মিউটেশনের দরুণ হয়ে থাকে। তাই সোরিয়াসিসে বংশগত বা পারিবারিক ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা পৃথিবীর প্রায় ১-২% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকল বয়সের ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলেও সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মাঝে। অন্যান্য বছরের মত এ বছরও পুরো আগস্ট মাস জুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সোরিয়াসিস সচেতনতা মাস।
আমাদের শরীরে ত্বকের এপিডার্মিসে ৫ টি কোষস্তর থাকে। এই সকল স্তরের কোষগুলি যেমন প্রতিনিয়তই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, আবার সেটা নতুন করে তৈরি হয়ে পূরণও হয়ে যাচ্ছে। সোরিয়াসিসে এই কোষবৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ত্বকের সবচেয়ে গভীরের স্তর থেকে নতুন নতুন কোষ সবচেয়ে ওপরের স্তরে আসতে স্বাভাবিকভাবে সময় নেয় ২৮ দিন আর সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় মাত্র ৫-৭ দিন।
লক্ষণ : সাধারণত শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকে, বিশেষ করে হাঁটু, কনুই, পিঠ ইত্যাদিতে লালচে ছোপ পড়ে, যার ওপর আবার রুপালি বা সাদা খসখসে মাছের আঁশের মতো পরিবর্তন দেখা দেয় যা সিলভার স্কেল নামে পরিচিত। সচরাচর এসব জায়গায় তেমন চুলকানি হয় না। কারও কারও হাত-পায়ের তালু ও মাথার ত্বকে সমস্যা দেখা দেয়। মাথার ত্বকে সোরিয়াসিস হলে অনেক সময় তা খুশকি বলে ভুল হতে পারে। এ রোগে হাত ও পায়ের নখও আক্রান্ত হয়ে ক্ষয়ে গর্ত হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা : সোরিয়াসিসের নানা ধরনের চিকিৎসা আছে। রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন অয়েন্টমেন্ট, ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তীব্রতা অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ওষুধও দরকার হতে পারে। পাশাপাশি এখন বায়োলজিক ওষুধের মতো আধুনিক চিকিৎসাও সুলভ হয়েছে। বর্তমানে সোরিয়াসিসে ফটোথেরাপিও প্রয়োগ করা হচ্ছে।
সতর্কতা : সোরিয়াসিস হলে তা পুরোপুরি সেরে যায় না। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কয়েকটি বিষয় যেমন কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, উদ্বেগ বা স্ট্রেস, ত্বকে কোনো আঘাত বা কাটা-ছেঁড়া এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। শীতকালে এ সমস্যার তীব্রতা বাড়ে। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে রোগের তীব্রতা বাড়তে পারে। সরাসরি সূর্যালোক ও শুষ্ক ত্বক সোরিয়াসিস আক্রান্ত রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাই সরাসরি রোদে অনেকক্ষণ থাকা যাবে না। ত্বক আর্দ্র রাখতে ত্বকে নিয়মিত অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেল ব্যবহার করা যায়। সোরিয়াসিসের সঙ্গে অস্থিসন্ধির ব্যথাও উপস্থিত হতে পারে। একে বলে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস। ত্বকের ৯০ শতাংশ আক্রান্ত হলে এটি মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি করতে পারে, তবে এ হার খুবই নগণ্য। সোরিয়াসিস রোগীদের অনেকেই হতাশায় ভোগেন ও বিব্রত থাকেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে এটি জীবনব্যাপী রোগ হলেও যথাযথ চিকিৎসা ও নিয়মিত নজরদারিতে ভালো থাকা যায়। বাংলাদেশে সোরিয়াসিস অ্যাওয়ারনেস ক্লাব এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস (স্বাস্থ্য),
মেডিকেল অফিসার,
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা।
খুলনা গেজেট / এমএম