খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

সুন্দরবনের মধু আহরণ শুরু, মৌচাকের কিছু অংশ রাখার নি‌র্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় মধু আহরণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জর বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের পর মধু আহরণের অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হয়। পাস নিয়ে মৌয়ালরা গভীর বনে মধু সংগ্রহ করতে যায়। চলতি মৌসুমে তিন হাজার ৮০০ কুইন্টাল মধু আহরণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে, প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে মধু আহরণের অনুমতি দেওয়া হলেও গত বছর ১৫ মার্চ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বৃষ্টিস্বল্পতায় খুব একটা মধু পাওয়া যায়নি। ফলে এবছর সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ফের ১ এপ্রিল থেকে অনুমতি দেয়া শুরু হয়। প্রথমদিনে এ রেঞ্জের আওতায় ৬০টি নৌকার অনুমতিপত্র নিয়ে প্রায় ছয় শতাধিক মৌয়াল গভীর বনে গিয়েছে। তবে খুলনা রেঞ্জের কোন অফিস থেকে এখনও কাউকে পাশ দেয়া হয়নি। খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ নিয়ে এ বনবিভাগ গঠিত।  ২ এপ্রিল থেকে খুলনা রেঞ্জের মৌয়ালদের পাশ দেয়া শুরু হবে বলে খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ ফরেষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে, চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ নিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ গঠিত। পূর্ব বনবিভাগে ১৫ মার্চ থেকে অনুমতিপত্র দেওয়া শুরু হলেও শরণখোলা রেঞ্জের কেউ পাশ নেননি। তারা ১ এপ্রিল থেকে পাশ নেয়া শুরু করেছে। এদিন শরণখোলা রেঞ্জের আওতায় ৩৪টি নৌকার পাশ দেয়া হয়। তবে চাঁদপাই রেঞ্জের আওতায় ১৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পযন্ত ১৫টি নৌকার পাশ নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করে।
সুন্দরবন পশ্চিমবন বিভাগ থেকে ২০২২ সালে ২ হাজার ৩২০ কুইন্টাল মধু ও ৬৯৬ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়। আর সুন্দরবনের মধু থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং মোম থেকে ১৫ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। ২০২১ সালে ৩ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯০ কুইন্টাল মধু ও ১১৩ দশমিক ৯ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়। আর মধু থেকে ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৩ টাকা ও মোম থেকে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়। এর আগে ২০২০ সালে তিন হাজার ২২৭ কুইন্টাল, ২০১৯ সালে দুই হাজার ২৭৮ কুইন্টাল, ২০১৮ সালে এক হাজার  ৬০১ কুইন্টাল মধু পাওয়া যায়।
আরও জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায়। গত বছর সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৪০৪ টি নৌকার অনুমতিপত্র দেয়া হয়। গত বছর এ রেঞ্জে এক হাজার ৪৪৯ কুইন্টাল মধু ও ৪৩৪ দশমিক ৭০ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়। এ বছর সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগে তিন হাজার কুইন্টাল মধু ও ৮০০ কুইন্টাল মোম পাওয়ার আশা কর‌ছেন বন‌বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ থেকে ২০২২ সালে ৬৮৮ কুইন্টাল মধু ও ২০৬ দশমিক ৫৬ কুইন্টাল মোম পাওয়া যায়। মধু থেকে রাজস্ব আসে ১১ লাখ ৮০০ টাকা এবং মোম থেকে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩২ টাকা। এ বছর পূর্ব সুন্দরবন থেকে ৮০০ কুইন্টাল মধু ও ২৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ব বন বিভাগের আওতায় সবচেয়ে বেশি মধু পাওয়া যায় শরণখোলা রেঞ্জে। শরণখোলা রেঞ্জের বন থেকে গত ২০২২ সালে ৪৬০ দশমিক ৩৫ কুইন্টাল মধু  এবং ১৩০ দশমিক ৯০ কুইন্টাল মোম  আহরণ করা হয়। এতে সরকার রাজস্ব পায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮৬ টাকা। এ মৌসুমে শরণখোলা রেঞ্জে ৫০০ কুইন্টাল মধু ও ১৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
সব মিলিয়ে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ থেকে এ বছর ৩ হাজার ৮০০ কুইন্টাল মধু ও ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল মোম পাওয়া যাবে বলে বনবিভাগ আশা করছে।
মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ও গারণ ফুলের মধু পাওয়া যায়। আর শেষের দিকে কেওড়া, গিউ ও  ছইলা ফুলের মধু পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো ও দামী হচ্ছে খলিশা ফুলের মধু। এ বছর কিছু বৃষ্টি হওয়ায় ভালো মধু পাওয়ার আশা করছেন মৌয়ালরা।
খুলনার কয়রার মৌয়াল আলেক উদ্দিন বলেন, আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বনবিভাগের অনুমতিপত্রের আশায় রয়েছি। দু’একদিনের মধ্যে পাশ নিয়ে বনে যাবো। আমরা একটি নৌকায় ৮ জন যাবো। প্রতি ১৫ দিন পরপর মধু নিয়ে ফিরে আসি। ১৫ দিনে ৮ থেকে ১২ মণ মধু পাই। গত বছর ২ মাস মধু আহরণ করি। খরচ বাদে ৪৬ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব বলেন,  ১৫ মার্চ মধু সংগ্রহের অনুমতি দেয়া শুরু হলেও মৌয়ালরা কেউ অনুমোদন নেয়নি। কারণ এ অঞ্চলের বনে সাধারণত বৈশাখ থেকে মধু পওয়া যায়। মৌয়ালরা ১ এপ্রিল থেকে পাস-পারমিট নেওয়া শুরু করেছে। প্রথমদিনে ৩৪টি নৌকার পাশ নিয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, গত বছর মধুর সিজনে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় মধুর পরিমাণ কম হয়েছিল। বৃষ্টির সঙ্গে মধুর একটা সম্পর্ক আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ফুল ঝরে যায় ও ফুলে মধুর পরিমাণ কমে আসে। এ বছর মৌসুমি মার্চ মাসেই কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। তাই এবার মধুর পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বাড়বে বলে বিশ্বাস রয়েছে।
তিনি জানান, সুন্দরবনে নির্বিঘ্নে মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া এবার বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য গ্রুপের একজন মৌয়ালকে সবসময় চারিদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মৌচাকের কিছু অংশ রেখে কাটতে বলা হয়েছে। মৌচাকের যে স্থানে ডিম থাকে সেখান থেকে কিছুটা রেখে বাকী অংশ কাটলে মৌচাকের সংখ্যা চারগুন বৃদ্ধি পাবে। ফলে মধুও বেশি পাবে।
খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!