খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা, বরিশালে আজ বৃষ্টি হতে পারে

সিরিজ জয়ের পরেও ১০ পয়েন্ট হারাল বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার পরেই বলেছেন, শেষ ম্যাচটিতে জয় তুলে নিয়ে ওয়ার্ল্ডকাপ সুপার লিগে আরো ১০ পয়েন্ট অর্জনে চোখ তাদের। এক ম্যাচ হাতে থাকতে সিরিজ হারানো আফগানিস্তানেরও ছিল একই ভাবনা। আজ সোমবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টস করতে নেমে হাসমতউল্লাহ শহিদি বললেন, সিরিজ হারলেও ১০ পয়েন্ট তাদের কাছেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দুই দলের এই ১০ পয়েন্টের লড়াইয়ে জয়ের হাসি হেসেছে আফগানরা। সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯২ রানে অলআউট বাংলাদেশ দল। লিটন দাস ছাড়া স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের সবার ব্যাটিংই প্রশ্নবিদ্ধ। সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে আফগানিস্তান। ১৯৩ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে দাপট দেখিয়েই ৭ উইকেট এবং ৫৯ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে তারা। এতে গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্ট গিয়েছে তাদের পকেটে।

শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের সান্ত্বনা হয়ে থাকল সিরিজের জয়ের ট্রফিটুকু। এদিকে শেষ ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাসে রসদ পেল আফগানরা। এ ম্যাচ হারায় পাকিস্তানকে টপকে আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে ওঠার সুযোগ হারাল বাংলাদেশ দল।

গত বছর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছিল তামিমের দল। তবে শেষ ম্যাচ হেরে হারিয়ে বসে ১০ পয়েন্ট। আফগানদের বিপক্ষেও একই পরিণতি। যদিও ম্যাচের আগে টাইগার শিবিরের ভাবনা ছিল সে সব ভুলে গিয়ে ‘ইতিবাচক চিন্তা’ করা। তবে সিরিজ জয়ী দলটির ক্রিকেটারদের এদিন আত্মবিশ্বাসে ফাটল দেখা গেল। ব্যাটিংয়ে হতশ্রী অবস্থার পর ফিল্ডিংয়েও ছিল গা ছাড়া ভাব। হাত ফসকে গেছে সহজ ক্যাচ। রিভিউগুলোও ব্যবহার হয়নি যুতসইভাবে।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ আর রিয়াজ হাসানের ব্যাটে সাবধানী শুরু করেছিল আফগানিস্তান। প্রথম ৬ ওভারে গুরবাজ কিছুটা মেরে খেলার চেষ্টা করলেও রিয়াজ ছিলেন সতর্ক। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাবলীল খেলা শুরু করেন দুই ব্যাটসম্যান। উদ্বোধনী জুটিতে ৭৯ রান যোগ করেন তারা। ইনিংসের ১৬তম ওভারে রিয়াজকে স্টাম্পিংয়ে ফাঁদে ফেলে এই জুটি ভাঙেন সাকিব। মুশফিকের ব‍্যর্থতায় হাতছাড়া হতে বসেছিল সুযোগ। তবে দ্বিতীয় সুযোগ কাজে লাগান তিনি। ৪৯ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করে ফেরেন রিয়াজ।

দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহকে নিয়ে ১০০ রানের জুটি গড়েন গুরবাজ। মাঝে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মাত্র ৫৩ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। সেই ফিফটিকে পরে রূপ দেন শতকে। এজন্য ভাগ্য আর প্রতিপক্ষকে ‘ধন্যবাদ’ দিতে পারেন তিনি! ইনিংসের ২৩তম ওভারে শরিফুল ইসলামের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করেছিলেন ডানহাতি এই ব‍্যাটসম‍্যান। ঠিক মতো পারেননি, গ্লাভস ছুঁয়ে ক‍্যাচ যায় মুশফিকের কাছে। কিছুটা সরে গিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে লাফের মতো দিয়ে গ্লাভসে জমাতে পারেননি কিপার।

শরিফুলের করা পরের ওভারে আরো একবার জীবন পান গুরবাজ। এবার ফাইন লেগে ক‍্যাচ যায় মাহমুদউল্লাহর কাছে। বিস্ময়করভাবে বল মুঠোয় জমাতে পারেননি তিনি। প্রথম ওয়ানডেতে প্রায় একইভাবে একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন তিনি। ৬০ রানে বাঁচার পর এবার ৬১ রানে জীবন পেলেন গুরবাজ। শরিফুলের করা পরে ওভারে ‘হ্যাটট্রিক’ জীবন পান গুরবাজ। তৃতীয় ক্যাচটি ফসকে যায় মুশফিকের হাত থেকে। পরে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম আফগান ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক তুলে নেন গুরবাজ।

মাঝে রহমত শাহ ৪৭ ও ২ রানে থাকা হাসমতউল্লাহকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ততক্ষণে অবশ্য জয় থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে চলে এসেছে আফগানরা। পরে ৭ চার ও ৪টি ছয়ে ১০৯ বলে গুরবাজের ১০৬ রানের ইনিংসের কল্যাণে ৭ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানিস্তান।

এর আগে চট্টগ্রামের টস জিতে লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন কর‍তে আসেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে ইনিংসের প্রথম বলেই ফজল হক ফারুকিকে খেলতে গিয়ে লাইন হারান তামিম। এ যাত্রায় লেগ বিফোর থেকে বেঁচে যান তিনি। বিপদের আঁচ পাওয়া বাংলাদেশ দলের শুরুটা ছিল খানিকটা ধীরগতির। কিছুটা সময় নিতে লিটন অবশ্য ফেরেন নিজের চেনা ছন্দে। যদিও অন্যপ্রান্তে তামিম অস্বস্তিতে ভোগেন।

ইনিংসের ১১তম ওভারে বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনি জুটি থামে ৪৩ রানে। সিরিজের আগের দুই ম্যাচে ফারুকির বলে আউট হওয়া তামিম এদিন লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক থাকায় বল সোজা আঘাত হানে স্টাম্পে। ১ চারে ২৫ বলে ১১ রান করেন তামিম। এরপর তিনে নেমে ভালো শুরু পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে লিটনের সঙ্গে জুটিটা জমাতে পারেননি। তাদের দ্বিতীয় উইকেট পার্টনারশিপ থেকে আসে ৬১ রান।

আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শর্ট বল থার্ড ম‍্যানে পাঠাতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু বল যায় স্টাম্পে। ভীষণ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব। করেন ৩৬ বলে তিন চারে ৩০ রান। তার আগেই অবশ্য ফিফটির দেখা পান লিটন। ইনিংসের ২০তম ওভারে আজমতুল্লাহর বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন এই ডানহাতি ওপেনার। ৬৩ বলে পাওয়া অর্ধশতককে তিন অঙ্কে রূপ দিতে পারেননি লিটন। নিজের পঞ্চাশতম ওয়ানডেতে নবীর বলে থামেন ১১৩ বলে ৭ চারে ৮৬ রানে।

লিটনের আউটের আগে আর সাকিবের আউটের পর মুশফিকুর রহিম আর ইয়াসির আলির উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। রশিদ খানের আউটসাইড এজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক। ১৫ বলে ৭ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ওই স্পেলেই রাব্বিকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান রশিদ। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা রাব্বি ফেরেন ৪ বলে ১ রানে। আফিফ হোসেন ৫ আর মেহেদী মিরাজ ৬ রান করে আউট হলে থিতু হতে পারেননি তাসকিন আহমেদ।

১৭৬ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ দল। মাহমদুউল্লাহ রিয়াদ শেষ দিকে ৫৩ বলে ২৯ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেললেও দলীয় রান দুইশ পার করতে পারেননি সতীর্থদের ব্যর্থতায়। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে ১৯২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রশিদ খান।

খুলনা গেজেট/ টিআই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!