সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় ৭ জন রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কাজী আরিফ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কিমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অক্সিজেন সংকটে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্বজন হারানো ব্যক্তিদের।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মারুফ আহমেদ ও সামেক হাসপাতালের ডাঃ সাইফুল্লাহ। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ করোনা ডেডিকেটেড সামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ২৮৫ রোগী ভর্তি রয়েছেন। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে এই হাসপাতালে। বুধবার বিকাল থেকে অক্সিজেনের চাপ কমতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার পর হঠাৎ করে অক্সিজেন সরবরাহে চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে তীব্র অক্সিজেন সংকটে পড়েন রোগীরা। ঘন্টাদেড়েক এ অবস্থা বিরাজ করছিল। ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ না পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে পরপর সাতজন রোগী মারা যায়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৬ জনের কথা স্বীকার করেছেন।
এসময় হাসপাতালের ৪র্থ তলায় আইসিইউ ও সিসিইউ’র সামনে রোগীর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে সেখানকার বাতাস। যশোর থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌছে রাত আটটার দিকে সমস্যার সমাধান করেন। মৃতের স্বজনদের অভিযোগ,অক্সিজেনের অভাবে এসব রোগী মারা গেছেন। তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সামেক হাসপাতালের একজন কর্মচারি জানান, অক্সিজেন সিস্টেমে যে সকল কারিগরি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তাদের অবহেলায় এতগুলো রোগীর জীবন দিতে হলো। সময়মত পর্যবেক্ষণে রাখলে যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি তাৎক্ষনিক সমাধান করা যেত। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা হলে, বিকল্প হিসেবে সিলিন্ডার অক্সিজেন পৌছে দেওয়া যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলী নুর খান বাবুল বলেন, ২২ লাখ সাতক্ষীরাবাসির স্বাস্থ্যসেবার প্রধান আশ্রয়স্থল সামেক হাসপাতালে এই অব্যবস্থাপনা সহ্য করা যায়না। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সামেক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত-ই-খুদা জানান, বুধবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হঠাৎ করে অক্সিজেনের চাপ কমে যায়। ফলে আইসিইউ’র মধ্যে ৪ জন ও সিসিইউ’তে ২ জনসহ মোট ৬ জন রোগী মারা যায়। অক্সিজেন ঠিক ছিল। অক্সিজেনের কোন ঘাটতি ছিলনা। তবে কি কারণে অক্সিজেনের চাপ কমে গেল, তা তদন্তে মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কাজী আরিফ আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের ঘটনায় তত্বাধয়াককে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজন পড়লে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।