জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর অগনিত বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করে আলবদর রাজাকাররা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত করার যে চেষ্টা করেছিল, বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তি তা ব্যর্থ করে দেয়। পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবি হত্যার আগেই পাকিস্তানি হানাদাররা বুঝতে পেরেছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ভূখন্ডে তাদের শাসন শোষণ আর সামরিক দন্ড টিকিয়ে রাখা যাবে না। একারনেই তারা ৯ মাসব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল। স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীর প্রাক্কালে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ করে তোলার আহবান জানানো হয়েছে।
মহান শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস পালন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৪ডিসেম্বর) শহরের পলাশপোলস্থ সাতক্ষীরার সাংবাদিক ঐক্য মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন আলোচক মুক্তিযোদ্ধা, অতিথি এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিক ঐক্য’র আহবায়ক সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সদস্য সচিব শরিফুল্লাহ কায়সার সুমনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, সাবেক সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, নাগরিক আন্দোলনের নেতা ও মানবাধিকার কর্মী স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, জনকণ্ঠ’র মিজানুর রহমান, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক আবুল কাশেম, সদস্য সচিব আমিনা বিলকিস ময়না, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আব্দুল জালিল, ডিবিসি’র সাংবাদিক এম জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ জাসদ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, গণফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বুদ্ধিজীবিরা মেধা ও বুদ্ধিশক্তির উৎস্য। আর তরুনরা সেই উৎস্যকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে। মেধা ও শক্তির এই সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। রাজাকার আলবদর ও আলশামসরা আমাদের জাতির সূর্য সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করেছে। নৃশংসভাবে হত্যার পর তাদেরকে বধ্যভূমিতে ফেলে দিতো। তাদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মী, আইনজীবি, কবি ও সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। সারাদেশে এমন শত শত বধ্যভূমি সংরক্ষিত করে বীর শহীদদের স্মরণে রাখার দায়িত্ব আমাদের।
বক্তারা আরো বলেন, এখনও স্বাধীনতা বিরোধীরা নানাভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের ভোল পাল্টিয়ে চলছে। অথচ এরাই মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসাবে বাঙালি জাতিকে পরাস্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারাই এখন মুক্তিযোদ্ধা সাজার চেষ্টা করছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা হচ্ছেন নানাভাবে অবহেলিত। বক্তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রক্ষার প্রশ্নে একটি উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘ধর্মীয় রাজনীতি জিতলে মানবতা ধ্বংস হয় আর মানবতা জয়লাভ করলে ধর্ম সুরক্ষিত হয়’। তারা বলেন, বধ্যভূমিগুলিও রয়েছে অরক্ষিত। এগুলোর খবরও অনেকে রাখেন না। এসব বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণের দাবি জানান বক্তারা।
খুলনা গেজেট/এএ