‘লক ডাউন চলাকালীন সময়ে সাতক্ষীরায় এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে’। কোন সংস্থার বিরুদ্ধে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার (২৯ জুন) তাঁর ফেসবুকে এধরনের একটি পোস্ট করেন।
এদিকে এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে মর্মে জেলা প্রশাসক ফেসবুকে পোস্ট করায় এনজিও থেকে ঋণ গৃহীতা সাতক্ষীরাবাসী মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পেয়েছে। অনেকেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে কমেন্ট করেছেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার বিষয়টি কেউ মানছেন না বলেও অনেকেই আবার ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন। এনিয়ে বুধবার (৩০ জুন) দুপুর পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের পোস্টে কমেন্ট করেছেন জেলার তিন শতাধিক নাগরিক।
অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের অনুরোধ অমান্য করে সাতক্ষীরায় কঠোর লকডাউনের মধ্যেই অধিকাংশ এনজিও তাদের ঋণের কিস্তি আদায় অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও গত ১০জুন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, ‘লকডাউন চলাকালে ক্ষুদ্রঋণ আদায় কার্যাক্রম বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হলো।’ এরপরও লকডাউন চলাকালীন সময়ে এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী স্থানীয় সংস্থাগুলো ও প্রতিষ্ঠান গুলোর ক্ষুদ্র ঋণ আদায় কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি।
এক ব্যক্তি তার কমেন্টে লিখেছেন, এনজিও কর্মীরা দোহাই দিচ্ছে যে, কিস্তি আদায় করা যাবে না এমন ধরনের কোনো লিখিত বা নোটিশ সরকার বা প্রশাসনের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। তাদের কথা হচ্ছে যতদিন প্রশাসনিকভাবে কোনো লিখিত নোটিশ সামনে না আসবে ততদিন টাকা আদায় হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাহক জানান, সমিতির নাম বলে বিপদে পড়তে চাই না। আগের মতোই এখনো সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় এনজিও যেমন কিস্তি আদায় করছে, তেমনি জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত বড় এনজিও একই কাজ করছে। এতে করে চরম বিপদে পড়েছে ভ্যান, রিক্সা চালকসহ খেটে খাওয়া দিনমুজুর শ্রেণীর মানুষ।
শহরের রাজার বাগান জমিসউদ্দিন নামে একজন ভ্যান চালক বলেন, একদিন ভ্যান না চালালে দিন চলে না। তিন সপ্তাহ আগে আমার স্ত্রী কন্যা সন্তান প্রসব করেছে। খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। লকডাউনের মধ্যে ভয়ে বের হয়নি। একদিন ভ্যান নিয়ে রাস্তায় উঠতেই আমার ভ্যানটি পুলিশ নিয়ে নিয়েছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ভ্যানে ব্যাটারি লাগিয়েছিলাম। এনজিও কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে এসে কিস্তির জন্য জোরাজুরি করছে। লকডাউনের মধ্যে কোন কাজও পাচ্ছিনা। অনেক বিপদের মধ্যে আছি। এখন যে অবস্থা অসুস্থ স্ত্রীকে লোকের বাড়িতে কাজে পাঠানো ছাড়া কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, মঙ্গলবার থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় হবে না। এর পরে কোন সংস্থার বিরুদ্ধে ঋণ আদায়ের অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই