সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশাখালিতে বসবাসরত ভূমিহীনদের নয়টি বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ, চারটি ঘর ভাংচুর ও ১০জন নারী ও পুরুষকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেবহাটা উপজেলার চালতেতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াদ আলী ঢালীর স্ত্রী ছফুরা খাতুন ও একই এলাকার সবুজ সরদারের স্ত্রী আকলিমা খাতুন বাদি হয়ে সাতক্ষীরার আমলী আদালত-৭ এ ১৪ জন কথিত ভূমির মালিকদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এ মামলা দায়ের করেন।
এদিকে খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদের দখল নিতে ভূমিহীনদের ঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কথিত ভূমির মালিকরা জমি সংক্রান্ত মিথ্যে তথ্য দিয়ে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালি মৌজার এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে প্রশাসনিক ও ম্যানেজ মেন্ট এর দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে এম খবর পেয়ে ওই জমি সরকারি খাস জমি হিসেবে পাওয়ার লিখিত আবেদন জানিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দেবহাটার সাপখালি খালের পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবার প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে ছোট ছোট খুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে। ভূমির মালিক হিসেবে দাবিদার আইডিয়াল এর ডাঃ নজরুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন ওই জমির বৈধ মালিক দাবি করে ভূমিহীনদের নামে আদালতে একে একে সাতটি মামলা দায়ের করেন। তাতেও লাভ না হওয়ায় তারা পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ সস্মেলন করেন। একপর্যায়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন, আকলিমা খাতুন, মোমেনা খাতুন, খায়রুল ইসলাম, তার শালিকা মুনিয়া খাতুন, সবুজ সরদার, আব্বাস আলী, ফতেমা খাতুন, তাছলিমা খাতুন ও ফরিদুল ইসলামসহ নয়জনের বসতঘর পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয় ভাতের হাঁড়ি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ভূমিহীনদের ব্যানারে থাকা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয় ১০জন।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী ছফুরা খাতুন বাদি হয়ে কাজী গোলাম ওয়ারেশসহ ছয় জনের নাম উল্লেখ করে গত ৩ অক্টোবর ও আকলিমা খাতুন বাদি হয়ে ৫ অক্টোবর আহছানউল্লাহ ঢালীসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে সাতক্ষীরার আমলী আদালত-৭ এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক বিলাস কুমার মন্ডল তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াদ আলী ঢালীর স্ত্রী ছফুরা খাতুন ও ভূমিহীন আকলিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ঘের লুটপাট, বাসা ভাংচুরের মিথ্যা অভিযোগে ভূমিহীন নেতৃবৃন্দের নামে কথিত ভূমির মালিকরা সাতটি মামলা করেও শান্তিতে ছিলেন না। তারা ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, মারপিট ও লুটপাট করেছেন। তাদের ভয়ে আহতরা সখীপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেনি। এমনকি থানায়ও মামলা করতে পারেনি। বাধ্য হয় ভূমিহীনদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার পর কথিত ভূমির মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা প্রাশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে দৌড় ঝাঁপ করার পাশপাশি সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই