সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ রোধে দ্বিতীয় মেয়াদের লকডাউন শনিবার (১২ জুন) ভোর রাত ১২ টা থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ১৮ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলাব্যাপী এই লকডাউন বলবৎ থাকবে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও ঠেকানো যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি। গত ৫জুন থেকে সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় লকডাউন শুরু হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদের লকডাউনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেনাকাটার সময় এক ঘন্টা এগিয়ে সকাল ৮ টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই লকডাউন বাস্তবায়নে এবং মানুষকে ঘরে রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা অব্যহত রেখেছে। রাস্তায় ছোট যানবাহন ও সীমিত পরিসরে মানুষ চলাচল করছে। শহরের ছোট ছোট গলি রাস্তাগুলোর মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে আন্ত:জেলা ও দুরপাল্লার গণপরিবহন। পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশরোধে সীমান্তে বিজিবি’র কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে। জেলাব্যাপী অব্যহত আছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. জয়ন্ত সরকার জানান, জেলায় এপর্যন্ত ২ হাজার ৩২৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ সময় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১০ হাজার ৪৭ জনের। এরমধ্যে বর্তমানে ৬৮৩ জন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছে। এছাড়া অন্যরা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। জেলায় করোনা শনাক্তের প্রথম দিন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। জেলায় করোনায় মোট মৃত্যু ৫১জন ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গে মৃত্যু হয়েছে ২৪২জনের। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা পজিটিভ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৮৮জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৮জন করোনা পজিটিভ এসেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চলতি জুন মাসের ১১ দিনে সাতক্ষীরা জেলায় ১৪২৬ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। জুনের ১১ দিনে শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। মে মাসে জেলায় ১৩৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্ত হয় ৩০৫ জনের। মে মাসে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ শনাক্তের প্রথম দিন থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাতক্ষীরায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। মে মাসে শনাক্তের হার বেড়ে হয় ২২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং জুন মাসে তা বেড়ে দাড়ায় ৪৯ দশমিক ৫১শতাংশে।
এদিকে সাতক্ষীরায় পর্যাপ্ত বেড, ডাক্তার ও জনবল সংকটে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যবিভাগ। বর্তমানে ৬৮৩ জন করোনা পজিটিভ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩৫ ও সদর হাসপাতালে ৩৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। অন্য রোগীরা রয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক কোয়ারেন্টাইনে।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়েত জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ টি আইসোলেশন ও ১৩৫টি বেড ছাড়াও আট বেডের আইসিইউ রয়েছে। এছাড়া সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেড রয়েছে মাত্র ৩৫ টি। আরও বেড ও জনবল না থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা। শনিবার (১২ জুন) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ১৫ টি বেড স্থাপনের কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরায় ১৮৮ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৬৮ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। সংক্রমণের হার ৩৬ শতাংশে নেমে আসায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই