সাতক্ষীরায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গত তিন অর্থ বছরে ১৮০টি অভিযান পরিচালনা করে চারশ ৪৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৩৬ লাখ ২৬ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমান করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা।
এসব অভিযানে ওজনে কম দেওয়া, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য পণ্য বিক্রি, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, খাবারে বিষাক্ত বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার, মিথ্যে বা চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনে নিম্মমানের পণ্য বিক্রি করা, ভেজাল পণ্য বিক্রি, বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি ও বাজারজাত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অধিদপ্তরটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদেরকে এই অর্থ জরিমানা করা হয়। তবে, আইনে ভোক্তাদের সুবিধার কথা বলা হলেও জনসচেতনতা অভাবে সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে (নভেম্বর পর্যন্ত) প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সাতক্ষীরায় ৫০টি অভিযানে ১২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৮২টি অভিযানে ১৮৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা ও ২০২০-২১ অর্থ বছরে পৃথক অপর ৪৮টি অভিযানে ১২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু অভিযোগ সমাধান করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, কোন ভোক্তা প্রতারিত হওয়ার এক মাসের মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরে বিনামূল্যে লিখিত অভিযোগ করতে পারবনে। প্রাথমিক তদন্ত করবে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে করা হবে মামলা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে পরিমাণ আর্থিক জরিমানা করা হবে, তার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়। ধরুন, আপনি বাজারে পণ্য ক্রয় করার জন্য গেলেন। এসময় বিক্রেতা পণ্য সরকারি নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাহলে আপনি সেই ক্রয় রসিদসহ ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। কারণ, বেশি মূল্যে বিক্রি করা আপনার ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন বা কোনো পণ্য কিনলেন। আবার পণ্য ক্রয়ের পর দেখা গেল সেটা ভেজাল বা নকল পণ্য, সে ক্ষেত্রেও আপনি অভিযোগ করতে পারেন।
জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান জানান, কোনো দোকানে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করা ভোক্তা অধিকার-বিরোধী কাজ। শুধু এটিই নয়, খাবারে বিষাক্ত বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা নিষেধ। মিথ্যে বা চাতুর্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে নি¤œমানের পণ্য কিনতে উদ্বুদ্ধ করা, দাম অনুযায়ী মান বা সেবা প্রদান না করা, ওজনে বা পরিমাপে কম দেওয়া বা এ সংক্রান্ত কোনো জালিয়াতি করা, নকল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য তৈরি বা বিক্রি করা ভোক্তা অধিকারে বিরোধী কাজ বা দন্ডনীয় অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, সরকারি যেসব সেবা আপনাকে দেওয়া হয় যেমন যোগাযোগ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়োনিষ্কাশন এসব নিয়েও আপনি অভিযোগ করতে পারবেন ভোক্তা অধিকার আইনে। খাবার দোকান, আবাসিক হোটেল বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা নিয়েও অভিযোগ থাকলেও এ আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। একই আইনে এ সংক্রান্ত ভোক্তাবিরোধী কাজের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং নগদ অর্থ জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক মোঃ নাজমুল হাসান বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ২০০৯ সালের হলেও এ আইনের বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সে কারণে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় কম। এ বিষয়ে যত বেশি অভিযোগ পাওয়া যাবে আমরা তত বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন এ আইনে অভিযোগকারী দুই দিক থেকে লাভবান হয়। প্রথমত, ভোক্তা তার চাহিদা মাফিক সেবা পায়। দ্বিতীয়ত, অভিযোগ প্রমানিত হলে যে অর্থিক জরিমান করা হয়, তার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে এ আইনের সুফল আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।