সাতক্ষীরায় স্ত্রীর সঙ্গে ইটভাটা শ্রমিকের অনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্য দেখে সহ্য করতে না পেরে ভাইয়ের সহযোগিতায় দু’জনকে মাথায় আঘাতের পর গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে ওড়না ও মাফলার বেঁধে দু’পাশে দু’জনের গলায় ফাঁস লাগিয়ে আম গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে সোমবার বিকালে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃত সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার শ্রীপতিপুর গ্রামের শেখ আব্দুল হাইয়ের ছেলে নিহত ফতেমা খাতুনের স্বামী শেখ আহসান ওরফে হাসান ও তার ছোট ভাই শেখ আসাদ। পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড উদ্ধার করেছে।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবীর জানান, রোববার সকালে উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের শ্রীপতিপুর গ্রামের শেখ আব্দুল হাইয়ের বাড়ির সামনে আম গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় তার পুত্রবধু ফতেমা বেগম ও ফতেমার বাপের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক করিম পাড়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। করিমের সঙ্গে ফতেমার ধর্ম ভাই বোনের সম্পর্ক ছিল। ফতেমার স্বামী কিছুটা অপ্রকৃতিতস্ত। সে কারণে ফতেমার সঙ্গে করিম পাড়ের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শনিবার করিম পাড় শ্রীপতিপুর গ্রামে ফতেমার বাড়িতে আসে। রাতে নির্ধারিত স্থানে না শুয়ে ফতেমাকে নিয়ে পাশের পরিত্যক্ত চাল বিহীন ঘরে শুয়ে ছিল করিম। গভীর রাতে হাসান স্ত্রীর সঙ্গে করিমের ওই দৃশ্য দেখে ফেলে। একপর্যায়ে সে তার ছোট ভাই আসাদকে নিয়ে ওই দু’জনের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। পরে তাদেরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বিষয়টি আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করতে করিমের মাফলার ও ফতেমার ওড়না একসাথে বেঁধে দুই প্রান্তে দুই মৃতদেহের গলায় ফাঁস লাগিয়ে বাড়ির সামনের আম গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয় তারা দু’ভাই।
পরবর্তীতে পুলিশ লাশ দু’টি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রোববার বিকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফতেমার স্বামী হাসান ও দেবর আসাদকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ফতেমা ও করিমকে হত্যার কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় নিহত করিম পাড়ের বাবা জয়নাল পাড় বাদি হয়ে কারো নাম উলেখ না করেই রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হাসান ও আসাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড জব্দ করা হয়।
ওসি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত হাসান ও আসাদ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ফতেমা ও করিম পাড়কে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় জানান, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে হাসান ও আসাদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই