সাতক্ষীরায় বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছে মৃত্যু। ফলে ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সমাকে) হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে পাঁচ নারীসহ আরো ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে ৭ জন রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের বেনু গাজীর ছেলে আব্দুল হামিদ গাজী (৭৫), একউ উপজেলার বকচর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম পারভেজ (৪৮), তালা উপজেলার শার্শা সেনের গাতি গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৬০), কলারোয়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সফুরা খাতুন (৬০), সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা এলাকার মফিজুল ইসলামের স্ত্রী খায়রুন্নেছা (৪০), কুখরালী এলাকার মনিরুজ্জামানের স্ত্রী নাজমা খাতুন (৫০), পলাশপোল এলাকার শেখ নিজাম উদ্দিনের ছেলে শেখ কাদিরুল (৭৫), একই এলাকার সমশের আলীর ছেলে আনছার আলী (৭৫), সদর উপজেলার ভাড়খালী গ্রামের মৃত অজেত আলীর ছেলে কওছার আলী (৫২) এবং দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে তুহিন (৪৫)।
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, যশোরের শার্শা উপজেলার পশ্চিমকোট্রা গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে ইদ্রিস আলী (৬২), সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার বড়বিলা গ্রামের শাহাজান সরদারের স্ত্রী ফতেমা খাতুন (৫১), দেবহাটা উপজেলার ভাড়াশিমলা গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদ খানের ছেলে আকরাম হোসেন খান (৬৩) ও শ্যামনগর উপজেলার সোনাখালী গ্রামের কাশেম গাজীর ছেলে আশরাফ হোসেন গাজী (৪৭)।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে উল্লেখিতরা গত ২০ মে থেকে ৩০ জুনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্ণার ও করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ জুন ভোর রাত ১টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু হয়। তবে এদের মধ্যে সামেক হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয় চলাকালীন সময়ে সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭ টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়।
এরা হলেন, নাজমা খাতুন সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিট, আব্দুল হামিদ, সফুরা খাতুন, খায়রুন্নেছা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা, আকরাম হোসেন খান সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট, তুহিন সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট এবং আশরাফ হোসেন সন্ধ্যা ৭ টা ৫৫ মিনিটে মারা যান। সামেক হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয় দেখা দেয় সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এর আগে বিকাল থেকে অক্সিজেনের চাপ কমতে শুরু করে। অক্সিজেন বিপর্যয় চলাকালিন সময়ে কিছু রোগীকে সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
এনিয়ে, জেলায় ৩০ জুন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭৪ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অন্ততঃ ৩৫০ জন।
এদিকে সাতক্ষীরায় ফের বেড়েছে সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে আরো ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় সামেক হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০৬ জনের। শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর আগেরদিন শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ।
সাতক্ষীরা সদর হাসপতালের মেডিকেল অফিসার ও জেলা করোনা বিষয়ক তথ্য কর্মকর্তা ডাঃ জয়ন্ত কুমার সরকার জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন করোনা পজেটিভ রোগী সহ আরো ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সামেক হাসপতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ জনের পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। সনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ০৫ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, বুধবার (৩০ জুন) পর্যস্ত সাতক্ষীরায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪২৩ জন। জেলায় মোট সুস্থ্য হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৫ জন। জেলায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৪ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অন্ততঃ ৩৫০ জন। বর্তমানে জেলায় করোনা রোগী রয়েছে ৮০৯ জন। হাসপাতালে ভর্তি করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৪ জন। এর মধ্যে সামেক হাসপাতালে ২৫ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাড়িতে হোম আইসোলেশনে আছেন ৭৬৫ জন। উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৯০ জন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২৬০ জন এবং বেসরকারি হসপাতালে ১৪৯ জন। সরকারি ও বেসরকারি মিলে জেলায় মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৩৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৫ জন। জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ২৫৪০ জন।
এদিকে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারনে ৭ জন রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার কুদরত-ই-খুদা বলেন, অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়নি, অব্যহত ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে অক্সিজেনের চাপ একটু কমে যাওয়ার কারনে হাসপাতালের আইসিইউ’তে ৪ জন ও সিসিইউ’তে ২ জনসহ মোট ৬ জন মারা গেছে। রাত আটটার দিকে অক্সিজেন সরবরাহ আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। সাময়িক সমস্যা হলেও বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক আছে।
খুলনা গেজেট/এনএম