সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে রাস্তার পাশে বাজারের ব্যাগের মধ্য থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে অবশেষে নয়টি শর্ত সাপেক্ষে দত্তক দেয়ার সুপারিশ করেছে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড। তাকে দত্তক নিতে গত দুই’দিনে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৯জন লিখিতভাবে আবেদন করেছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের ৯জন সদস্য শিশুটিকে দত্তক নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের লিখিত আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করেন। যাচাই-বাছাই শেষে একজন নিঃসন্তান সরকারি কর্মকর্তাকে শিশুটিকে দত্তক দেয়ার বিষয়ে সাতক্ষীরার শিশু আদালতের কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করেছেন শিশু কল্যাণ বোর্ড। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুটিকে ওই সরকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
শিশু কল্যাণ বোর্ডের ৯টি শতের্র মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হল- যিনি শিশুটিকে দত্তক নিবেন তিনি ওই শিশুর নামে গ্রামে বসবাস করলে ৫০ শতক ও শহরে বসবাস করলে ১০ শতক জমি প্রদান করবেন, শিশুটির নামে ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা ৬ মাসের মধ্যে এফডিআর করবেন, দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতার সম্পত্তি অংশীদার হবে শিশুটি, তাকে অনার্স-মাষ্টার্স পড়াতে হবে, পরবর্তী দ্বিতীয় কোন শিশু দত্তক নিতে পারবেন না, নিজ সন্তানের মতো তাকে দেখভাল করতে হবে এবং সন্তানকেও পিতামাতার দেখভাল করতে হবে, উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক যেকোন শর্ত পরবর্তীতে আরোপ করা যাবে।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক রাসেল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২৯টি আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে শিশুটিকে দত্তক দেয়ার জন্য শিশু আদালতের কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি পেলে শিশুটিকে ওই সরকারি কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
শিশু কল্যাণ বোর্ডের ৯ সদস্য বিশিষ্ট সদস্যের অন্যরা হলেন, সদস্য সচিব উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুল¬াহ আল মামুন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অর্ণা চক্রবর্তী, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুন্নাহার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, রবিবার (৪ অক্টোবর) বিকালে কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের গোলখালী মহাশ্মশানের কাছে পড়ে থাকা একটি বাজারের ব্যাগ থেকে ওই নবজাতকটিকে উদ্ধার করেন কয়েকজন পথচারী। তারা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের হেফাজতে রাখা হয় শিশুটি। স্থানীয়ভাবে তার নাম রাখা হয় মহারাজ। বর্তমানে শিশুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুস্থ রয়েছে। শিশুটিকে দত্তক হিসাবে পাওয়ার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৯ জন ব্যক্তি আবেদন জানিয়েছেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন