সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আইনজীবীদের দু’গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি দেয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের দু’গ্রুপের মধ্যকার এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সামাল দিতে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে আইনজীবীদের মধ্যে কুন্ডু তপন কমিশন মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে। মনোনয়নপত্র সরবরাহের ধার্য দিনে সভাপতি ও সম্পাদক সহ বিভিন্ন পদের বিপরীতে মোট ৫৫ জন আইনজীবী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
নির্বাচন কমিশনার এড. নাজমুন নাহার জানান, নির্ধারিত সময়ে সোমবার সাবেক সভাপতি ড. এড. রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে ২০টি, সাবেক সভাপতি এড. শাহ আলমের নেতৃত্বে ১০ টি এবং এড. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া এড. তোজাম্মেল হোসেনসহ ব্যক্তিগতভাবে অনেকেসহ মোট ৫৫ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে বিবাদমান সকল পক্ষের আইনজীবীরা রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এড. নাজমুন নাহার আরও বলেন, আইনজীবী সমিতি বিজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান। নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও নির্বাচনের মাঠে সবাই অংশগ্রহণ করবেন। তা না হলে নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়বেন। এজন্যই আজ সবগ্রুপই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড. কুন্ডু তপন কুমার বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল, ১০ ফেব্রুয়ারি বাছাই ও প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ১৩ ফেব্রুয়ারি আপত্তি দাখিল ও নিষ্পত্তি, ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহার এবং ওই দিনই চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
অপরদিকে সোমবার দুপুরে সমিতির আবুল হোসেন- সবুজ গ্রুপের পক্ষ থেকে জেলা আইনজীবী সমিতির ২নং বিল্ডিং এর নিচতলায় একটি সাধারণ সভা আহবান করা হয়। সমিতির সভাপতি এ্যাডঃ মোঃ আবুল হোসনে (২) এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ আ,ক,ম, রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ এর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডঃ আলহাজ্ব এস,এম, হায়দার, এ্যাডঃ আলহাজ্ব স,ম, সালাহউদ্দিন, এ্যাডঃ মোঃ আব্দুল মজিদ, পিপি এ্যাডঃ আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ, এ্যাডঃ সৈয়দ এখলেছার আলী বাচ্চু, এ্যাডঃ বি,এম, মিজানুর রহমান পিন্টু, এ্যাডঃ মোজাহার হোসেন কান্টু, এ্যাডঃ গোবিন্দ চন্দ্র বল্লভ, এ্যাডঃ এস,এম, আতাউর রহমান প্রমুখ। সভায় দুই শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
সভায় সমিতির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায় সাবেক সভাপতি এ্যাডঃ এম, শাহ আলম এর সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া আগামী ৭ দিনের মধ্যে আত্মসাৎকৃত ১৪,৪৮,৭৯৯ টাকা আইনজীবী সমিতিতে পরিশোধে ব্যর্থতায় আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ চিরতরে প্রত্যাহার হয়েছে বলে পরিগণিত হবে। উক্ত অপরাধের জন্য বার কাউন্সিলের বিধান মতে চিরতরে তার সনদ বাতিলের জন্য আইনজীবীদের আবেদনসহ সভার রেজুলেশনের কপি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে প্রেরণ করা হবে।
এদিকে সাতক্ষীরা যুগ্ম জজ প্রথম আদালতে আবুল-সবুজ কমিটি ও হায়দার কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বারের সদস্য এড. আমিনুর রহমান চঞ্চল। মামলায় ২৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও ৩১ জানুয়ারী বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত এ মামলায় সাতজন বিবাদীর বিরুদ্ধে দুই দিনের শোকজ করেছে।
এ মামলার বিবাদীরা হলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত সভাপতি এড. আবুল হোসেন (২), সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম. রেজওয়ান উল্লাহ সবুজ, সম্প্রতি গঠন করা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এড. এসএম হায়দার, এড. মোঃ শফিকুল ইসলাম খোকন, এড. শম্ভু নাথ সিংহ, এড. খায়রুল বদিউজ্জামান ও এড. শাহনাজ পারভীন মিলি।
অপরদিকে জেলা আইনজীবীদের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জের ধরে সোমবার দ্বিতীয় দিনের মত সমিতির কাগজপত্র বিক্রি কেন্দ্র বন্ধ থাকায় উকালতনামা, বেলবন্ড, হাজিরাসহ কোন কাগজপত্র কিনতে পারেনি বিচার প্রার্থীরা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ বিচার প্রার্থীরা।
কালীগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দ মধুসুধনপুর গ্রামের আবু তালেব সরদার, তালার ইসলমাকাটির অরুপ মন্ডল, সদরের কাশেমপুরের শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আইনজীবী সমিতির দু’গ্রপের বিরোধকে কেন্দ্র করে সমিতির বিক্রি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত তুরাব আলীকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে মারপিট করেন কয়েকজন আইনজীবী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সমিতির ১৯ জন কর্মচারি বিক্রয়কেন্দ্রসহ কয়েকটি কক্ষে তালা লাগিয়ে চাবি সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন(২) এর কাছে দিয়ে চলে যান। রোববার তারা মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে কাজে না আসায় গত দু’ দিনে উকালতনামা, বেলবন্ড, হাজিরাসহ কোন কাগজপত্র কিনতে পারেনি। ফলে বিচারপ্রার্থীরা নতুন মামলা ফাইলিং, জামিন আবেদন, হাজিরা ও বেলন্ড কিনতে পারেননি। এ অবস্থায় বিচারপ্রার্থীরা শুধুমাত্র হয়রানি হয়েছেন তা নয়, আইনজীবী সমিতির কাগজপত্র বিক্রি না হওয়ায় দু’দিনে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্টাম্প ভেন্ডররা সমিতির হাজিরার কাগজ চড়া দামে বিক্রি করেছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার সকাল থেকে আদালত চত্বরে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন ছিল বলে জানান কয়েকজন আইনজীবী।