খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ পৌষ, ১৪৩১ | ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আরও ৬০ দিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
  রমজান ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত
  দেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত : আইইডিসিআর

সাতক্ষীরার সমাজ সেবার অনুদান পেলো নামসর্বস্ব ৭৬ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় নামসর্বস্ব ৭৬টি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে মর্মে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। কাগজে-কলমে নাম-ঠিকানা তাকলেও বাস্তবে নেই-এমনই অনেক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে অনুদান। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অনুদান দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অনেকেই। তবে সমাজ সেবামূলক কার্মকান্ড পরিচালনা করেনা বা শুধুমাত্র ঋণদান কার্যক্রম পরিচালান করে এমন সংগঠন যদি ভূয়া কাগজপত্র দাখিল করে বরাদ্দ নিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুদানপ্রাপ্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শুধুমাত্র ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিছু প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র সমাজসেবার রেজিস্ট্রেশন থাকায় দেওয়া হয়েছে অনুদান। আবার কখনও সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড না করলেও শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন এবং সাইনবোর্ড থাকায় পেয়েছেন অনুদানের টাকা। সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে অনুদান দেওয়া হয়েছে উপজেলা অফিসার্স ক্লাব ও খেলাধুলার ক্লাবকেও। অনুদানপ্রাপ্ত কয়েকটি সে¦চ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তারা জানান, রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে অনুদান পাওয়া পর্যন্ত তাদের ঘুষ দিতে হয়। ঘুষের টাকা না পেলে রেজিস্ট্রেশনও হয় না অনুদান দেওয়ার জন্য নামও সুপারিশ করা হয় না।

সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা অফিসের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশনকৃত এক হাজার ১৪৫টি সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরের ৭৬টি সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা করে ১৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই নামসর্বস্ব।

অনুদানের তালিকা থেকে দেখা যায়, সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় ১২টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-কামালনগরের জনতা উন্নয়ন সংস্থা, পুরাতন সাতক্ষীরায় পিপলস ডিভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, মুন্সীপাড়া মানবিক সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, পলাশপোলের জনমুখী ফাউন্ডেশন, পুরাতন সাতক্ষীরায় মানব কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা, কাটিয়ায় অনামিকা মহিলা উন্নয়ন সমিতি, পলাশপোলে সানমুন উন্নয়ন সংস্থা এবং সুলতানপুরের রুশা। এছাড়াও পৌর এলাকায় আরও যে চার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-জেলা অফিসার্স ক্লাব, কাটিয়া রেজিস্ট্রি অফিসপাড়ার সুমনা ফাউন্ডেশন, কামালনগরের শাপলা এবং কলেজ রোডের সুইড খাতিমুন্নেছা হানিফ লস্কর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৮টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি সংগঠনের কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-প্রগতি মানবকি সংগঠন, তালতলা সাউদার্ন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন (এসসিএফ)ও ভোমরার নিরাপদ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। এছাড়াও সদর উপজেলার আরও যে ৫টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো, জোড়দিয়ার সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন সংস্থা,মাধবকাটির প্রাইড ফাউন্ডেশন, মুকুন্দপুরের নব দিগন্ত সংস্থা, কাসেমপুরের ড্রীমল্যান্ড অর্গীনাইজেশন ও বলাডাঙ্গার প্রতিভা জন কল্যাণ সংস্থা।

তালা উপজেলায় ১০টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি সংগঠনের কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-দাঁদপুরের অগ্রগামী যুব সংঘ, লক্ষণপুরের আনছার মাহমুদ স্মৃতি সংস্থা, মুড়াকালিয়ার সহায়, পাটকেলঘাটার সোনালী স্বপ্ন সমাজ কল্যাণ সংস্থা, শাহাজাতপুরের ইউসুফ স্মৃতি সংঘ, হাজরা পাড়ার মানবতা উন্নয়ন সংস্থা ও নাংলার অলোক। এ উপজেলার আরও যে ৩টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-তালা অফিসার্স ক্লাব, সুজনসাহার মানবসেবা সংস্থা ও জাতপুরের ডিজিস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডিএমএফ)।

শ্যামনগর উপজেলায় ১৪টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি সংগঠনের কার্যক্রম খুজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-নকিপুর আদর্শ সমাজ কল্যাণ সংস্থা, নকিপুর ছাইমা ফাউন্ডেশন, সোনাখালীর সোনাখালী সুন্দরবন সমাজ কল্যাণ সংস্থা, শ্রীফলকাটি এসসেজন কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও শ্যামনগর উপজেলা ভুমিহীন সমাজ কল্যাণ সংস্থা। এ উপজেলার আরও যে ৯টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-শ্যামনগর অফিসার্স কল্যাণ ক্লাব, বাদঘাটা উপকূলীয় শিক্ষা ও বৈচিত্র উন্নয়ন সংস্থা (সিডিও), মুন্সিগঞ্জ ড্রীম লাইটার, মুন্সিগঞ্জের ‘লিডার্স’ লোকাল ইনভারনমেন্ট ঢেভেলপমেন্ট এ্যান্ড এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সোসাইটি, ঝাপার উত্তর ঝাপা সংগ্রামী সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ডুমুরিয়ার কিরণ, যতীন্দ্রনগরের সুন্দরবর যুব সংঘ, মুন্সিগঞ্জের সুন্দরবন উপকুলীয় আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা ও খাসকাটার খাসকাটা দুর্বার যুব সংঘ।

দেবহাটায় উপজেলায় ৮টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি সংগঠনের কার্যক্রম খুজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-রহিমপুর আপন, দেবহাটার তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, সখিপুর মিতালী সংঘ। এই উপজেলার আরও যে ৫টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো, অফিসার্স ক্লাব, দেবহাটার আশার আলো, সখিপুরের অনিক ফাউন্ডেশন, সুশীলগাতির নব জাগরণ সংঘ ও হাদিপুরের সততা যুব কল্যাণ সংঘ।

কলারোয়ায় উপজেলায় ৮টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-মির্জাপুর গোধুলী উন্নয়ন সংস্থা, বামনখালির আশার আলো সমাজকল্যাণ সংস্থা, হেলাতলার সাতক্ষীরা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, কয়লার উন্নয়ন পরিষদ, মানব উন্নয়ন সংস্থা, জালালাবাদের দেশ, ঝিকরার মুক্তি ও বলিয়ানপুরের সীমান্ত উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এ উপজেলায় অধিকাংশ সংগঠনের কোন কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি সংগঠনের কার্যক্রম খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ফতেপুরের মোহনা সংসদ, ভদ্রখালীর ভদ্রখালী স্টেডিয়াম ক্লাব, নলতার মানবাধিকার জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন ও সাদপুরের লাইফ সেন্টার। এ উপজেলার আরও যে ৪টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-অফিসার্স কল্যাণ ক্লাব, নলতার মিডা, শংকরপুরের বন্ধন সংস্থা ও নলতার সমাজ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।

আশাশুনি উপজেলায় ৮টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অনুদানপ্রাপ্ত এসব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টি সংগঠনের কার্যক্রম খুজে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, কচুয়া প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা, কুন্দুড়িয়ায় বাস্তহারা কল্যাণ সংস্থা, বুধহাটায় সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন, বাঁকড়ার বাঁকড়া ইউনাইটেড ক্লাব, নাটনার নাটানা মাতৃমঙ্গল সমিতি ও আশাশুনির ব্রাইট স্পোটিং ক্লাব। এর মধ্যে ২টি স্পোটিং ক্লাব ও ২টি ঋণদান প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে অনুদান।এ উপজেলার আরও যে ২টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-অফিসার্স ক্লাব ও বদরতলার মৌমাছি।

আশাশুনি উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, রেজিস্ট্রেশনকৃত সংগঠন যথাযথ কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করেন। তাই যাচাই বাছাই করার কোন প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে কোন অভিযোগও নেই। তবে অভিযোগ পেলে আগামীতে তাদের আর দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান।

সাতক্ষীরা জেলা সমাজ সেবা অফিসের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ বলেন, উপজেলা কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে জেলা কমিটির মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হয়। অনুদান পেতে হলে তাদের অবশ্যই সমাজ কল্যাণমুলক কাজের কার্যক্রম থাকতে হবে এবং উক্ত অর্থ অবশ্যই সমাজ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজ কল্যাণমূলক কাজের বাইরে অনুদানের এ টাকা খরচ করার সুযোগ নেই। অনুদানের টাকার অনিয়ম বন্ধ করতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারদের উপস্থিতিতে বিতরণ বা প্রচারণামূলক কর্মকান্ড করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাজ সেবামূলক কার্মকান্ড পরিচালনা করেনা বা শুধুমাত্র ঋণদান কার্যক্রম পরিচালান করে এমন সংগঠন যদি ভূয়া কাগজপত্র দাখিল করে বরাদ্দ নিয়ে থাকে তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। যদি এমন কোন সংগঠন পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!