দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে খেলেননি সাকিব আল হাসান। পারিবারিক কারণে ফিরে এসেছেন দেশে। একই কারণে এবার দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।
অন্যদিকে দেশের সেরা এই অলরাউন্ডার টেস্ট খেলতে চান না এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও সাকিব বহুবার মুখোমুখি অবস্থানে গিয়েছে। পাল্টাপাল্টি অলোচনা- সমালোচনাও কম হয়নি। তবে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে তিনি কি সত্যি টেস্ট খেলতে চান না!
নানা সূত্রে জানা গেছে, তার আর এই ফরম্যাটে খেলার ইচ্ছাও নেই। তিনি মনোযোগ দিতে চান ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই।
তাই নিজের ক্যারিয়ারের শেষ সময়টা বেশি চাপ না নিয়ে খেলার ইচ্ছা তার। তবে এই সবই গুঞ্জন। তিনি বিভিন্ন টেস্ট সিরিজে না খেললেও কখনো সরাসরি স্পষ্ট করে নিজের অবস্থান জানাননি। এসব কারণে অনেকে মনে করেন তাকে নিয়ে টানাটানি না করে এবার বিকল্প ভাবাই উচিত। কারণ বয়সটা যে তার ৩৫ বছর ছুঁয়েছে। এখন যত দিন যাবে তার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। এমন মতামত দিয়েছেন সাকিবের ক্রিকেট গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
তিনি বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় অনেক কারণেই না থাকতে পারে। আর ২-৩ বছর পর অবসরের সময়ও চলে আসবে। আমরা কীভাবে সাকিব ছাড়া খেলবো তা এখনই ভাবতে হবে। হঠাৎ করে সাকিবকে যখন পাবো না, তখন কী করবো? এখন থেকে প্রস্তুতি জরুরি।’
সাম্প্রতিক সময়ে সাকিবকে মাঠে পাওয়া যাচ্ছে কম। যতগুলো ম্যাচ খেলেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও বেশি ম্যাচ হাতছাড়া হচ্ছে পারিবারিক নানা সমস্যা আর মানসিক অবসাদে। এমন পরিস্থিতিতে সাকিবের বিকল্প ক্রিকেটার তৈরি করার ওপর জোর দেয়ার মতামত দিলেও নাজমুল আবেদিন কিছুটা হতাশও। কারণ সাকিবের মতো ক্রিকেটার যে আর সহজেই পাওয়া যাবে না তা তিনি জানেন খুব ভালো করেই।
তবে তার মতে, সাকিবের মতো খেলোয়াড়ের বিকল্প পাওয়া সম্ভব নয় এবং প্রায় ‘অসম্ভব’। তিনি বলেন, ‘ওর বিকল্প পাওয়াটা সহজ নয়। একইসঙ্গে ব্যাটিং ও বোলিং দু’টিতেই সমানভাবে কার্যকরী খেলোয়াড় পাওয়া বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক কঠিন। তাই সাকিবের বিকল্প পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা এমন কাউকে দেখছি না যে, ওর জায়গা নিতে পারবে। তবে ওর অবর্তমানেও খেলতে হবে এটাও মাথায় রাখতে হবে। আমাদের কার্যকরী অলরাউন্ডার গড়ে তুলতে হবে।’
যে কারণে টেস্ট ব্যাটিং নিয়ে হতাশা
ওয়ানডেতে দারুণ বাংলাদেশ দল। কিন্তু টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেন মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা এই দুই ফরম্যাটে একেবারেই ধারাবাহিক না। আজ সেঞ্চুরি তো কাল শূন্য। কেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি এমন অবস্থা তা নিয়ে ফাহিম বলেন, ‘আমার মনে হয় টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে খেলাটা আমাদের মুখস্থ না। ওয়ানডেতে খেলাটা আমাদের মুখস্থ। যেকোনো সময় ৩ উইকেট পড়ে গেলেও ৫ নম্বরে যে ব্যাট করতে যায় সেও জানে যে আমিতো এটা জানি কীভাবে কি করতে হবে। সবসময় যে সফল হবে তা না। কিন্তু এই যে মুখস্থ হওয়ার ব্যাপারটা, রুটিন আছে, প্যাটার্ন আছে এটা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা আছে। যে ধারণাটা ওখানে নাই। এ কারণে টেস্টে আমরা যখন ভালো খেলা শুরু করি তখন ভালো খেলি। কিন্তু খারাপ খেলা থেকে ভালোয় আসাটা হয়ে ওঠে না সবসময় আমাদের।’
আর টেস্টে এখনো উন্নতি করতে না পারার কারণটাও স্পষ্ট। খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ না পাওয়া। নাজমুল আাবেদিনও জানালেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সময় কিন্তু খুব কম টেস্ট খেলেছি। একটা টেস্ট সিরিজ খেলেছি কিংবা একটা বা দুইটা ম্যাচ খেলেছি। তারপর আবার অনেকদিন পরে টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। টেস্ট খেলার যে মানসিকতা সেটা তৈরি হয়নি। ওটাও একটা বড় কারণ। এখন হয়তো আমরা ঘন ঘন টেস্ট খেলছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা যারা গড়ে উঠেছে তারা কিন্তু একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেনি। তারা ৩-৪ বা ৫ ম্যাচের সিরিজ থেকে বের হয়ে আসেনি। দুটো ম্যাচ খেলেছে আবার হয়তো ৩ মাস ৪ মাস পরে আবার হয়তো দু’টো ম্যাচ খেলেছে। এটা কোনোভাবেই যথেষ্ট না।’