সুরাজ, বয়সে তরুণ। ফুটপথে পুরানো কাপড়ের ব্যবসা করে। বাবা স্থানীয় একটি হোটেলে চাকুরী করেন। মা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। ভালভাবে কাটছিল তাদের সময়। সংসারে কেবলমাত্র সুখের ছায়া পড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে সর্বনাশা আগুন তাদের সে স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর ফেরীঘাট দেবেন বাবু রোডের বস্তিতে আগুন লেগে ৪৪ টি ঘরের মধ্যে নয়টি পুড়ে যায়। তার মধ্যে সুরাজদের ঘরও ছিল।
মা-বাবাকে নিয়ে তিন সদস্যের পরিবার সুরাজের। ফুটপথে দাড়িয়ে পুরানো জামা কাপড়ের ব্যবসা করত সে। শীতের জন্য অনেক মাল ঢাকা থেকে কিনেছিল সুরাজ। এজন্য স্থানীয় একটি এনজিও’র মাধ্যমে দু’দিন আগে ৫০ হাজার টাকা ঋণও করেছিল। কিন্তু ঋণের টাকা সব আগুনে পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সে।
সুরাজ জানায়, জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। অভাবের সংসার হওয়ায় ঠিকমতো খেতেও পারেনি । লেখাপড়া তেমন একটা করতে পারেনি। অল্প করে পুঁজি জমিয়ে ঢাকা থেকে পুরানো কাপড়ের লট কিনে এনে ভ্যানে করে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিক্রি করতো। ঘর আগুনে পোড়ার কয়েকদিন আগে এক লাখ টাকা ও দু’দিন আগে আরও ৫০ হাজার টাকার মাল কিনে ঘরে রাখে। শীত বেশী পড়লে সেগুলো বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল। মনে অনেক স্বপ্ন ছিল। ব্যবসার লাভের টাকা জমিয়ে শীত পরবর্তী সময়ের ব্যবসা করবে। পরবর্তীতে সেই টাকা মা ও বাবার হাতে তুলে দিবে। যাতে মানুষের বাড়িতে মাকে, আর পরের দোকানে বাবাকে কাজ করতে না হয়। সে স্বপ্ন তার অধরা থেকেই গেল। সবকিছু আগুনে ছাই হয়ে গেল। ফেরীঘাট দেবেন বাবু রোড়ের একটি দোকানের সামনে বসে এভাবে বিলাপ করছিল সুরাজ।
সুরাজের বাবা গালিব আলী জানান, “জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। কেবল সুখের হাতছানি, সেটিও কেড়ে নিল। আগুন আমাদের মাথার ছাউনিও কেড়ে নিয়েছে।”
শনিবার দুপুরে নগরীর ফেরীঘাট দেবেনবাবু রোডে টিনার বস্তিতে আগুন লাগে। দুপুরে বয়রা সদরের দু’টি ও টুটপাড়া ফায়ার সাভিসের গাড়ি এসে আধাঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রেণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু আর আগেই পুড়ে যায় নয়টি ঘর।
খুলনা গেজেট/এএ