খুলনায় অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে জাহাজ ব্যবসায়ী চাচার কয়েক কোটি টাকা দামের কার্গো বিক্রি করে দিয়েছেন তার ভাতিজা। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর জাহাজ জরিপকারক সিরাজুল ইসলাম, ভাতিজা তরুন আকন ও ক্রেতা ফারজানা আমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী।
রোববার দুপুরে জাহাজ ব্যবসায়ী শামীম হোসেন খুলনা সদর থানায় মামলা করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে এ নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে শোরগোল পড়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, মেসার্স এস কে এন্টারপ্রাইজের মালিক শামীম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে খুলনাসহ দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে নৌপথে পণ্য পরিবহনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার মালিকাধীন এমভি আরকেডিএস-১ নামের কার্গোটি প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রায় দেড় হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কার্গোটির বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ আগস্ট চাচা শামীম হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে প্রথমে কার্গোটি নিজের নামে লিখে নেন ভাতিজা তরুন আকন। সাড়ে ৪ কোটি টাকা নগদে পরিশোধ করে তিনি কার্গোটি কিনেছেন বলে ভুয়া দলিলে উল্লেখ করা হয়। ১০ ডিসেম্বর ওই কার্গোটি ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ফারজানা আমান নামের আরেক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন তিনি।
জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ থেকে কার্গোর মূল কাগজ তুলতে কয়েক দফা প্রতারণার আশ্রয় নেন তরুন। প্রথমে তিনি কার্গোর মূল কাগজ হারিয়ে গেছে দাবি করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। জিডি ও বিজ্ঞপ্তিতে শামীম হোসেনের নাম উল্লেখ করলেও মোবাইল নম্বর দেওয়া হয় তরুন আকনের। এরপর ওই জিডি ও পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে দেখিয়ে বিআইডব্লিউটিএ থেকে কার্গোর কাগজপত্র উত্তোলন করা হয়।
ভুক্তভোগী শামীম হোসেন বলেন, কার্গোটি ভারত থেকে ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে পণ্য খালাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে কিছু লোক কার্গোর কাছে এসে জানায়, কার্গোটি তারা কিনেছেন। খবর পেয়ে আমি রাতেই সেখানে যাই। এর পরদিন বিআইডব্লিউটিএ’র অফিসে গেলে জানানো হয়, কার্গোটি বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, কার্গো বিক্রি ও দলিল হস্তান্তর করতে হলে বিক্রেতাকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। উপস্থিত ব্যক্তি প্রকৃত বিক্রেতা কি না নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়। কিন্তু আমি কার্গো বিক্রি করতে যাইনি। এমনকি কিছুই জানি না। আমার অজান্তে কার্গো বিক্রি হলো কীভাবে- জানতে চাইলে কর্মকর্তারা আমতা আমতা করতে থাকে। তখন বুঝতে পারি, জালিয়াতির সঙ্গে তারাও জড়িত।
ওই ব্যবসায়ী বলেন, কার্গোটি এখনও আরকেডিএস-১ নামে চলছে। কেউ জাহাজ কিনে আগের মালিকের নাম রেখে দেয়? এ ছাড়া সাড়ে ৪ কোটি টাকায় কার্গো কিনে একমাস পর কেউ কি ২ কোটি টাকায় বিক্রি করে? প্রত্যেক ঘটনায় প্রতারণার চিহ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিকার চেয়ে আমি খুলনা সদর থানায় মামলা করেছি। নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সব দপ্তরে চিঠি দিয়েছি।
এ ঘটনায় তরুন আকনের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত দুটি নম্বরে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
খুলনা সদর থানার ওসি কামাল হোসেন খান বলেন, কাগজপত্র দেখে প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। মামলাও গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়