খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭
আদালতে রানী-ইমনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

শিশু আলিফ হত্যা চেষ্টার নেপথ্যে বড় মামি-ছোট মামার পরকীয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামে ছয় বছরের শিশু আলিফ হোসেন ফারহানকে নির্যাতনকারী তার মামী রানী বেগম ও ছোট মামা আশিকুর রহমান ইমন মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বিকালে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এর আগে সোমবার দুপুরে মামী রানী বেগম ও রাতে ছোট মামা আশিকুর রহমান ইমনকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত রানী বেগম (২২) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী ও আশিকুর রহমান ইমন (১৬) চরবালিথা গ্রামের হাচিম সরদারের ছেলে। আশিকুর রহমান ইমন রানীর স্বামী আশরাফুল ইসলামের আপন ছোট ভাই।

এদিকে শিশু আলিফ হোসেন ফারহানের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে তার দু’ চোখে অস্ত্রপচার করা হয়েছে।

লোমহর্ষক এঘটনার পরপরই ভিকটিমের বাবা সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকায় বসবাসকারি মঈনুদ্দিন সরদার বাদি হয়ে দেবহাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের দিক নির্দেশনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে গোটা ঘটনার রহস্য উদাঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। একই সাথে এইঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শিশু আলিফ হোসেন ফারহানের মামী রানী বেগম ও ছোট মামা আশিকুর রহমান ইমনকে গ্রেপ্তার ও ঘটনায় ব্যবহৃত চাকু ও আসামির রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি রানী বেগম ও আশিকুজ্জামান ইমন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন উল্লেখ করে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, শিশু ফারহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান ও দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত এবং সাড়াশি অভিযানে নামে পুলিশ। শুরুর দিকে ঘটনার পুরো দায় শিশুটির বড় মামি রানীর ওপর চাপিয়ে দেয় ভিকটিমের পরিবার। তাৎক্ষণিক রানী বেগমকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে নেয়া হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরে রাতেই শিশুটির ছোট মামা আশিকুজ্জামান ইমনকেও গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে নেয়া হলে লোমহর্ষক গোটা ঘটনার রহস্যভেদ হয়।

ওসি ওবায়দুল্লাহ জানান, মা মারা যাওয়ার পর থেকে নানা বাড়িতেই থাকতো শিশু আলিফ ফারহান। বড় মামি রানী খাতুনকে মা বলে ডাকতো সে। তার বড় মামা কাজের সুবাদে বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই যশোরে থাকেন। এরই মধ্যে বড় মামি রানীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ফারহানের ছোট মামা আশিকুজ্জামান ইমন। সোমবার দুপুরে বড় মামি রানী ও ছোট মামা ইমনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে ফারহান। সেসময় বাড়িতে ছিলেন না শিশুটির নানা ও নানী। একপর্যায়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে মামি রানীর সহায়তায় ছোটমামা ইমন প্রথমে শিশু আলিফ ফারহানকে ঘরের ভিতরে ডেকে নিয়ে দুই হাত বেঁধে ফেলে। তারপর ইমন ধারালো চাকু দিয়ে নৃশংসভাবে শিশুটির দুই চোখ খুচিয়ে রক্তাক্ত করে দেয় এবং মুখমন্ডল, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে। একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে গেলে সুযোগ বুঝে তাকে মরিচ্চাপ নদীর পাশ্ববর্তী একটি গর্তে ফেলে আসে আশিকুজ্জামান ইমন। বাড়িতে ফিরে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত চাকু এবং রানী বেগমের রক্তমাখা সালোয়ার লুকিয়ে ফেলে ইমন। তাছাড়া ঘরের মেঝে থেকে রক্তের দাগও মুছে ফেলে তারা। এর কিছুক্ষণ পর কৌতূহলবশত ইমন ফের শিশুটিকে ফেলে আসা গর্তের কাছে যায় এবং কেউ তার ভাগ্নেকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে নাটকীয়ভাবে ডাক চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। শিশুটিকে হত্যাচেষ্টার পর তার ছোটমামা ইমন অত্যন্ত চতুরতার সাথে ভালো মানুষের অভিনয় করে আসছিল, যাতে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয় এবং পুরো ঘটনার দায় কেবলমাত্র বড় মামি রানী খাতুনের ঘাড়ে চাপে।

গ্রেপ্তারকৃত রানী ও ইমন মঙ্গলবার বিকালে এভাবেই সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে লোমহর্ষক এই ঘটনার বর্ণনা করে। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় বলে জানান ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ।

এদিকে, সোমবার দুপুরে মরিচ্চাপ নদীর পাশ্ববর্তী একটি গর্ত থেকে শিশু আলিফ ফারহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর তাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে এবং শিশু ফারহানের দুটি চোখে জরুরী অস্ত্রপচারের জন্য পরবর্তীতে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশু ফারহান।

জাতীয় চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভিকটিমের স্বজনরা জানিয়েছে, ধারালো ছুরি দিয়ে খোচানোর কারণে ফারহানের ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে এবং বাম চোখটিতে অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়েছে। তাকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছে, নির্ধারিত সময় শেষে বাম চোখটি ভালো হবে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারবেন চিকিৎসকরা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!