জাতির জীবনে এক বেদনাবহ দিন আজ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ঘটেছিল এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে লিপ্ত হয়েছিল ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি যেন মেধায়-মননে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে।
বিজয় উৎসবের আগে এই দিনটিতে জাতি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে আসছে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে এ কাজের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি খান। ১০-১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীরা হচ্ছেন, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. মুনীর চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. আনোয়ার পাশা, ড. আবুল খায়ের, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. সিরাজুল হক খান, ড. এ এন এম ফাইজুল মাহী, হুমায়ূন কবীর, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, সিরাজুদ্দীন হোসেন, আ ন ম গোলাম মুস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক।
সারা দেশের ন্যায় খুলনাতেও পালিত হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। করোনা পরিস্থিতে এ বছর সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) স্মৃতিসৌধে বরাবরের মতো সকাল থেকে নামবে না অগণিত মানুষের ঢল। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, সর্বস্তরের মানুষ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন, বিশেষত নতুন প্রজন্মের বাঙালি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অপর্ণ করবে স্মৃতিসৌধের বেদিতে। একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, সেই রাজাকার-আলবদরদের বিচার ও সাজা কার্যকর করার দাবিও জানানো হবে।
কর্মসূচি
সকালে গল্লামারী শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। এ লক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি পালনের লক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সম্মুখে সকাল নয়টার দিকে কালোব্যাজ ধারণ, নয়টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য কর্তৃক জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালোপতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে অদম্য বাংলায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া-মাহফিল ও বিশ^বিদ্যালয় মন্দিরে প্রার্থনা, সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে শহীদ মিনার ও অদম্য বাংলা চত্বরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।
‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার লক্ষে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, উপাচার্যের বাসভবন এবং আবাসিক হলসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন (অর্ধনমিত) ও কালোপতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শোক র্যালি, সাড়ে ১১টার দিকে আলোচনা সভা (জুম-মাধ্যম), বাদ আছর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া-মাহফিল, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নাটক (জুম-মাধ্যম) প্রদর্শিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে সকাল সাতটার দিকে গল্লামারি বদ্ধভূমির শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বাদ মাগরিব দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা হবে। এসব কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। সকাল সাতটার দিকে গল্লামারি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকাল ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠান হবে।
দিবসটি উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাব সকাল ১১টার দিকে আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুরূপ বাংলাদেশ বেতার খুলনা কার্যালয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
খুলনা গেজেট / এআর / এমএম