খুলনা জেলা প্রশাসন করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। জেলা প্রশাসনের ঘোষণায় জেলাব্যাপী এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে বিকাল পাঁচটার পর কোন দোকান, শপিংমল, রেস্তোরা ইত্যাদি খোলা রাখা যাবে না। সকল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এই বিধিনিষেধ আগামী রবিবার ১৩ জুন থেকে কার্যকর হবে।। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাহিরে বের হয়ে অযথা ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। লাইসেন্সধারী ইজিবাইক চলবে অর্ধেক এবং অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে। কাঁচাবাজার ও ঔষধের দোকান এই বিধিনিষেধ আওতামুক্ত থাকবে।
এছাড়া সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় খুলনা করোনা রোগীর চিকিৎসার শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। সে ক্ষেত্রে সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে অতিসত্ত্বর যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় আরও জানানো হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে সেখানে প্রতিদিন পাঁচশত রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। সভায় আরও জানানো হয় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গত সাতদিনে দুইশত ২৩টি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে তিন লাখ ৬২ হাজার পাঁচশত পয়তাল্লিশ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরণের মোবাইলকোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার বেলা ১১ টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। বক্তৃতা করেন রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন গুহ, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডি বাবুল রানা, পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘খুলনা বিভাগের অবস্থা খারাপ। সাতদিনের যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল তাতে তেমন কোন উন্নতি হয়নি। খুলনার বিষয়ে কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। খুলনার বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এক প্রান্ত খোলা রেখে অন্য প্রান্ত বন্ধ রেখে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে কেউ রেহাই পাব না।’
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মাদ ইসমাঈল হোসেন ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, সাতক্ষীরার প্রভাব খুলনায় এসে পৌঁছেছে। আম এবং বন্দরের মালামাল আনা নেওযায় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ায় সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। এখানে সংক্রমণ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। যশোরে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে বিধিনিষেধ চলছে। বাগেরহাটের মোংলায়ও বিধিনিষেধ চলছে।
গত ৩ জুন থেকে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর ও জেলার রূপসা থানায় বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়।
করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ থেকে শুরু করে এইচডিইউ এমনকি সাধারণ শয্যা কোথাও ফাঁকা নেই। ১শ’ শয্যার হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ১৩০ জন।
উল্লেখ্য, খুলনা জেলায় এ পর্যন্ত ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৯১ জন। জুন মাসের গত ১০ দিনে ৮৬৪ জন আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৮ জুন সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ শনাক্ত ১৫৬ জন। এটা এ মাসের সর্বোচ্চ।
খুলনা গেজেট/এনএম