খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

রমজান কাটুক জিকির তেলাওয়াতে

মুফতি আনিস বিন ওমর

কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত ছাড়া রমযান মাস যেন বরকতশুন্য আর আধুরা থেকে যায়। জিকির ছাড়া সিয়ম-সাধনা যেন লবন ছাড়া তরকারীর মত বিষাদ মনে হয়। তাই জিকির এবং তেলাওয়াত হাওয়া উচিত রোজাদারের নিত্য দিনের রুটিন।

কুরআন তেলাওয়াত

রমজান মাস কুরআনের নাযিলের মাস। সেই কুরআন ছাড়া এ মাসের বরকত কিভাবে হাসিল হতে পারে? আল্লাহ তা’আলা বলেন “এই রমজান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে”। সুরা বাক্বারা -১৮৫। এ মাসের সাথে কুরআনুল কারিমের এক নিগুড় সম্পর্ক রয়েছে, তাইতো এই মাসে কুরআন তেলাওয়াতের যে মজা, আগ্রহ ও অনুভুতি আসে তা অন্য কোন মাসে পাওয়া যায় না। রমজানে তেলাওয়াত করা মানে মুহুর্তের মধ্যে অনেক বেশি নেকী লাভ করা। হাদীসে এসেছে রমজান মাসে হুজুর স. নেকীর কাজে আরো বেশি অগ্রগামী হতেন। হযরত জিবরাইল আ. প্রতি রমজানে নবীজির কাছে আসতেন, নবীজি স. তাকে পুরা কুরআন শোনাতেন। বুখারী-১৯০২। অন্য বর্ণনায় এসেছে “মানুষের মধ্যে বেশি ইবাদতকারী সেই, যে বেশি কুরআন তেলাওয়াত করে। আল-ফাওয়াইদুশ শাহির-৮৪৫।

পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানব মুহাম্মাদ রসুলুল্লাহ। তিনি মুমিনদেরকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার উপায় বলে দিয়েছেন। কেউ যদি শ্রেষ্ট হতে চায়, সে যেন কুরআন পড়ে, কেননা خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَهُ যে কুরআন শেখে ও শেখায় সেই তোমদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। বুখারী ৫০২৭। এই রমযানে যে চায় তার উপর আল্লাহর বিশেষ রহম বর্ষিত হোক, সে কুরআন পড়তে না পারলেও কমপক্ষে যেন শ্রবণ করে।

ইরশাদ হচ্ছেوَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো। সুরা আ’রাফ ২০৪। যে চায় রবের সাথে নির্জনে কথা বলতে, সে যেন নির্জনে কুরআন তেলাওয়াত করে, কেননা- إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ كَلَامُ اللَّهِ، নিশ্চয়ই এই কুরআন আল্লাহ কালাম/কথা। সুনানে দারেমী ৩৩৯৮। সর্বোপরি কেয়ামতের দিন রবের দরবারে সুপরিশ পেয়ে জান্নাতে যাওয়ার আশা যে ব্যক্তি রাখে; সে যেন রোজার সাথে কুরআনকে আপন করে নেয়, কেননা রোজা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। মুসনাদে আহমাদ- ৬৬২৬।

কুরআন তেলাওয়াত যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভের কারণ, তেমনি অল্প সময়ে অনেক নেকি হাসিলের মাধ্যম। বুঝি চাই না বুঝি, কুরআনের প্রতিটি হরফের বিনিময়ে রয়েছে ১০ নেকি। তিরমিযী -১৯১০। সাথে রমজানের বর্ধিত অফার তো আছেই।

আমাদের সালফে সালেহীনরা রমযানে কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। ইমাম আবু হানিফা রহ. অনেক রমজানে ৬০ বার কুরআন খতম করতেন। তারিখে বাগদাদ-১৩/৬৫৭। ইমাম বুখারী রহ. রমজানের প্রতি রাতে ১ খতম কুরআন পড়তেন। আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া -১১খন্ড। হযরত আবু কাতাদা রহ. রমজানে প্রতি ৩দিনে এক খতম দিতেন। শেষ দশকে প্রতি রাতে ১ খতম দিতেন। সিয়ারু আলামীন নুবালা ৬খন্ড। হযরত শায়খুল হাদিস জাকারিয়া রহ. দৈনিক ১ খতম দিতেন। আপবীতি ২/৯৮।

এ মাসে সাধারণত আমাদের অবসর সময় বেশি থাকে, তাই কুরআন পড়া-পড়ানো, শেখা-শেখানো এবং কুরআনের মধ্যে ডুব দিয়ে তার মুক্তা হাসিল করতে তাদাব্বুর-তাফাক্কুর ও চিন্তা-গবেষণায় আত্ননিয়োগ করবো। কুরআন নাযিলের মাসে প্রতিটি মুমিনের সখ্যতা গড়ে উঠুক কুরআনের সাথে। আমাদের রমজান হয়ে উঠুক কুরআনময়।

জিকির

জিকির করা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ তা’আলা বলেন “হে ইমানদারগণ তোমরা বেশি বেশি আমার জিকির কর”। সুরা আহযাব -৪১। আল্লহর নৈকট্য লাভের অন্যমত মধ্যম হল আল্লাহ জিকির করা। রমজান মাস তো আল্লাহ নৈকট্য হাসিলেরই মাস। তাই মাহে রমজানকে আমরা জিকিরে ফিকিরে কাটাবো। দীর্ঘ হাদীসের এক অংশে রসুল স.সাহাবাদের প্রশ্ন-“প্রতিদানের দিক দিয়ে কোন রেজাদার বেশি উত্তম”? এর উত্তরে বলেন “যে রোজাদার বেশি জিকির করে” । মু’জামুল কাবির- ৪০৭।

কুরআনের মাসে আমরা কুরআন তেলাওয়াতে মনোযোগী হবো, কেননা কুরআন তেলাওয়াত উত্তম জিকির। সহীহ ইবনে খুজাইমা -২০৮। আল্লাহর জাত (আল্লাহ) ও সিফাতের জিকির করবো। যেমন হাদিসে এসেছে أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللهِ أَرْبَعٌ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় কথা/ জিকির ৪টি- সুবহানাল্লাহ, ২.আল-হামদুলিল্লাহ, ৩.লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ৪. আল্লাহু আকবর। সহীহ মুসলীম-২১৩৭। এছাড়া মাসনুন দুআসমুহ জিকিরের অন্তর্ভূক্ত।

যে ব্যক্তি জীবনে সাকসেস আর সফল হতে চায়, সে যেন বেশি বেশি জিকির করে। কেননা আমাদের রব বলেছেন “বেশি বেশি জিকির কর, যাতে তোমরা সফল হতে পারো”। সুরা আনফাল ৪৫।

যে চায় আল্লাহ তা’আলা তার প্রশংসা করুন, সে যেন বেশি বেশি জিকির করে, কেননা সুরা আলে ইমরানের ১৯১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রশংসা করেছেন, যারা শুয়ে, বসে, দাড়িয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করে।

যদি উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির করতে লজ্জা লাগে, বা সুযোগ ও পরিবেশ না থাকে তখন কিভাবে জিকির করবেন তাও আমাদের রব বলে দিয়েছেন وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَة وَدُونَ الْجَهْرِ তোমার রবের জিকির কর মনে মনে, বিনয়ের সাথে নিচু আওয়াজে। সুরা আ’রাফ ২০৫।

যে জিকির করেনা সে মৃত তুল্য, আর যে জিকির করে সে জীবিত, তার অন্তর জিন্দা مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لاَ يَذْكُرُ رَبَّهُ، مَثَلُ الحَيِّ وَالمَيِّتِ যে তার রবের জিকির করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত এবং মৃতের মত। বুখারী ৬৪০৭। সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হলো বেশি বেশি জিকিরকারীর জন্য আল্লাহ তা’আলা ক্ষামার ওয়াদা করেছেন। “বেশি বেশি জিকিরকারী নর-নারীর জন্য আল্লাহ তা’আলা প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও উত্তম প্রতিদান”। সুরা আহযাব-৩৫।

সুতরাং এই রমযানে দুনিয়ার বন্ধুদের আড্ডায় সময় অপচয় না করে মহান প্রভু, একনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সময় কাটুক কুরআন তেলাওয়াতে। আর রবের ক্ষমা ও মহা পুরস্কার পেতে তারই নাম জপি হার হালাতে। সেই তৌফিক আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে দান করেন। আমীন ॥

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, ইমদাদুল উলূম রশিদিয়া মাদরাসা।
ফুলবাড়িগেট, খানজাহান আলী, খুলনা।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!