আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার জেলার সাতটি উপজেলার ৮টি থানায় ৬০৬ টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। রঙের আঁচড় আর সাজসজ্জায় দুর্গাদেবীকে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার প্রতিমা শিল্পীরা। নানান রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মন্ডপের দুর্গা দেবীর প্রতিচ্ছবি।
সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলার ৮টি থানায় ৬০৬টি পূজামন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কলারোয়া উপজেলার ৪৮টি, তালা ১৯৬টি, সাতক্ষীরা সদরে ১১২টি, আশাশুনি ১০৮টি, দেবহাটায় ২১টি, কালিগঞ্জে ৫১টি ও শ্যামনগর উপজেলার ৭০টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর জেলায় পূজা মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৫৯৯টি। চলতি বছর পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৬০৬টি মন্ডপে। গত বছরের তুলনায় এবছর পূজামন্ডপের সংখ্যা ৭টি বেড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা শহর ও এর আশেপাশের বিভিন্ন মন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ মাটির কাজ শেষ করে দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড়, আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদা মাটির প্রলেপ লাগাতে। তাদের যেনো দম ফেলার সময় নেই। প্রতিমা শিল্পীরা রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন। তাই যেন ঘুম নেই প্রতিমা শিল্পীদের।
সদর উপজেলার ধুলিহর তেতুঁলডাঙ্গা এলাকার প্রতিমা শিল্পী নবদীপ সরকার বলেন, ১২ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করি। এ বছর ৬টি প্রতিমা তৈরি করছি। মাটির কাজ শেষ করেছি এখন রঙ তুলির কাজ করছি। বর্তমানে খড়, বাঁশ, মাটি, লোহাসহ সব কিছুর দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখন পোষে না।
প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিম্ন ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রত পৌন আউরে খরচ হয় ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মতো। আগের থেকে সব কিছুর জিনিসপত্রের দাম বেশি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।
সাতক্ষীরা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ জানান, এ বছর জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ৬০৬টি মন্ডপে পূজা হবে। এ জন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটলেও সাতক্ষীরায় এখনো পর্যন্ত ওই ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এই জেলায় ঘটেনি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। প্রতিটি পূজামন্ডপে আনসার সদস্যরা ডিউটিতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে থাকবে পুলিশ। প্রত্যেক অফিসার বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন করবে। পাশাপাশি যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো আছে তাদের ডিউটিগুলো সবসময় পর্যবেক্ষণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম