চার ফুট উচ্চতার একেকটি গাছ। ডালে থোকায় থোকায় ধরে আছে বরই। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। স্বাদে মিষ্টি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এগুলো কাশ্মীরি আপেল কুল হিসেবে পরিচিত। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘনা ইউনিয়নের আরশনগর গ্রামে এই বরইয়ের বাগান।
আরশনগর গ্রামের কৃষক হোসেন সরদার বছর দুয়েক ধরে এই বরই চাষ করছেন। প্রতিদিন বহু লোক তাঁর বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো। এতে হোসেন সরদার বেশ খুশি। তিনি আগামী বছর আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই বরইয়ের চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন। তার বরই বাগানে কাজ করে খেয়ে পরে ভালো আছে আরও ১২টি পরিবার। জেলার অন্য কৃষকেরা এ ধরনের বরই বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।
ওই বরই বাগানে দুর থেকে তাকালে লাল আর সবুজের মেলা বসেছে এমনটি মনে হবে। প্রথমে আচ করা কঠিন হয়ে পড়বে লালগুলো ফল, নাকি গাঢ় সবুজগুলো। পাশে গিয়ে বুঝা যায়, লাল কুলের ভরে নুয়ে পড়েছে গাছের ডাল। মাটি থেকে গাছের ডগা আর ডগা থেকে মাটি পর্যন্ত বরই আর বরই।
কাশ্মিরি জাতের কুল ছাড়াও এই কৃষক আরও দুই প্রকারের কুল চাষ করেছেন। এসব কুল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। হোসেন সরদারের-এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জানতে চাইলে হোসেন সরদার বলেন, ‘পাইকগাছা গদাইপুর গ্রাম থেকে প্রথমে বরই গাছগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। তিনবিঘা জমিতে সেই গাছের বাগান করেছি। যার মধ্যে রয়েছে আপেল কুল, কাশ্মিরী কুল এবং সাতক্ষীরার নারিকেল কুল। এখন সে সব গাছে বরই ধরেছে। আকর্ষণীয় রং হওয়ায় বাজারে এর কদর দিনে দিনে বাড়ছে। পাইকাররা বাগান থেকে কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা দরে বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাগানে মাত্র ৯০টি বরই গাছ আছে। এসব গাছের বয়স দু’বছর হয়ে গেল। প্রতিটি গাছে বরই ধরেছে তিন থেকে চার মণ করে। এ বছর বেশি ফলন আশা করিনি। এই জমিতে বরই চাষ করতে তাঁর ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আরও অন্তত ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।’
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলছেন, হোসেন সরদার কৃষি কাজে লেগে থাকে এবং সে গাছ নিয়ে গবেষণাও করে। তার বাগানের প্রতিটি গাছের ডালের গোড়ার দিকে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ ছাল তুলে ফেলেছে। ফলে এ বছর অন্য কোনো কৃষকের বরই গাছে ফলন ভাল না হলেও তার গাছের ডাল কুলের ভরে ভেঙ্গে পড়ছে। হোসেন সরদার একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। কিন্তু সে কারো কাছে হাত পাতে না। তিনি একজন স্বাবলম্বী চাষিও বটে। লেখাপড়ায় কোন রকমে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়েছিলেন। তবে ছেলে-মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এই কৃষি কাজ তাকে এনে দিয়েছে, জমি-জায়গা, বাড়ি আর সম্মান। প্রতিদিনই তার বাগান দেখে আসছে বহু লোক।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন খুলনা গেজেটকে জানান, ‘হোসেন সরদার সহজ ও সরল প্রকৃতির একজন কৃষক। কৃষি কাজ করেই তিনি স্বাবলম্বী। এমন একজন চাষি আমাদের জন্যেও অনুকরণীয়। তার বরইয়ের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। কৃষি কাজে তার অনেক দক্ষতা রয়েছে। আগামীতে কুলের সঙ্গি ফসল হিসেবে আদার চাষাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে এই উপজেলায় কৃষিতে যেনো অধিক বিপ্লব ঘটতে পারে।’
জানতে চাইলে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারনের অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তিনি একজন ভাল চাষি। বরই চাষে সে তার নিজের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। ফলন ভাল হয়েছে। যদিও এ বছর জেলার অন্যান্য জায়গায় বরইয়ের ফলন তেমন ভাল হয়নি। হোসেন সরদারের মতো অন্য কৃষকেরাও এ ধরনের বরই বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারবে বলে তিনি আশা করেন।’
খুলনা গেজেট / এআর / এমএম