খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

যশোর শিক্ষাবোর্ডে আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতি তদন্তে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর শিক্ষাবোর্ডের আড়াই কোটি টাকা চেক জালিয়াতির ঘটনায় মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার দুপুর ১২টায় দুদক কর্মকর্তারা শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন ও অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেন। এর আগে এদিন সকাল ১০টায় শিক্ষাবোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক সমন্বিত যশোর কার্যালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন জালিয়াতি চক্রের প্রধান বোর্ডের হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম।

এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মোল্লা আমীর হোসেন বলেছেন, চেক জালিয়াতি ঘটনার সাথে জড়িতরা টাকা ফেরত দিতে তার সাথে যোগাযোগ করে চলেছেন। তবে এ বিষয়টি এখন আর তার হাতে নেই, আদালতের মাধ্যমেই সবকিছুর নিস্পত্তি হবে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সরকারি কোষাগারে জমা দেবার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ দশ হাজার ৩৬ টাকার নয়টি চেক ইস্যু করে। এই নয়টি চেক জালিয়াতি করে ‘ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার দশ টাকা এবং ‘শাহীলাল স্টোর’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় দু’দিন পর রোববার বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ড অফিসে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। দুদক কর্মকর্তারা বোর্ড থেকে এ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন। একইসাথে তারা অভিযুক্ত ভেনাস প্রিন্টিংয়ের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বাবু ও শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বলেছেন। তবে দুদক কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি বা তাদের পরিচয়ও জানাননি।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর পলাতক রয়েছেন বোর্ডের হিসাব সহকারী ও জালিয়াতির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আব্দুস সালাম। রোববারও তিনি অফিসে যাননি। এদিন তার কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।

যশোর শিক্ষাবোর্ড অ্যামপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল বলেন, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম এর আগেও দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও সেইসময় তদবিরে তিনি রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটির টাকা জালিয়াতির সঙ্গেও তিনি জড়িয়ে পড়েন। যার কারণে তিনি এখন পলাতক রয়েছেন ও তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, আব্দুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে উপশহরে দুটি আলীশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় দশ বিঘা জমি, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকানা অর্জন করেছেন। এ সবই তিনি করেছেন বোর্ডের দুর্নীতির টাকায়।

যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতরা টাকা ফেরত দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তারা এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে দফায় দফায় দেনদরবার শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা বলেন, মাঝে দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় রোববার আমরা দুদকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছি। দুদক কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করেছেন। এরপর তারা তদন্তে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা বোর্ডে এসে চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত দু’জনের সাথে কথা বলেছেন।

বিষয়টি নিয়ে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, চেক জালিয়াতির ঘটনা জানাজানির পর থেকেই হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ কারণে সবার সন্দেহের তীর তার দিকেই রয়েছে। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা টাকা ফেরত দিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। অবশ্য এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। অভিযুক্তরা যদি টাকা ফেরতও দেয়, তবে তা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!