খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১৫
  ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের মৃত্যু
  এমন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা-বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা
ভাড়ার টাকা এক যুগেও জমা দেয়া হয়নি সরকারি কোষাগারে

যশোর জেলা আ’লীগ অফিসের ডিসিআর বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

অবশেষে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের লিজ বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। গত একযুগ যাবৎ দলটির নেতাকর্মীরা বাৎসরিক লিজের টাকা পরিশোধ করেননি। এ কারণে কয়েকদফা তাগাদা দেবার পর ডিসিআরের এ লিজ বাতিল করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

সরকার পতনের পর থেকে যশোর জেলা প্রশাসনে জমিতে লিজ দেয়া যশোর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় জোরেসোরে আলোচনায় আসে। শহরের গাড়িখানা রোডে সরকারি মালিকানাধীন সম্পত্তি এপি ভবনে দলীয় কার্যালয়ের অবস্থান। ডিসিআর বুনিয়াদে কোনো প্রকার ভাড়া না দিয়েই দখলে থেকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে টানা ১৩ বছর ব্যবহার করা হয়েছে।

জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল আয়তনের ভবনটি মাত্র ১ হাজার ৩শ’ ৩৩ টাকা মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি একটি টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে। যে কারণে ডিসিআর নবায়ন না হওয়ায় কার্যত এক বছরে পরেই ওই ডিসিআর বাতিল হয়েছে। আর এখন অবৈধ দখলদার হিসেবে রয়েছে বলেও দাবি যশোরের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আরডিসি বিধান কান্তি হালদারের।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। সেসময় যশোরে দলীয় কার্যালয়, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে যশোর তথা দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের সরকারি সম্পত্তি জবর দখলে রাখা, জুলুম নির্যাতন ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে চলে অভিযান। যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ব্রিজের দক্ষিণে আওয়ামী ঘরানায় অবৈধ দখলে থাকা রাজধানী হোটেলটিও উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। আর ওই সময় জেলা প্রশাসনে জোরেসোরে আলোচিত হয় খোদ যশোর জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভবনটিরও ডিসিআর নিয়েও। যা ভাড়া না দেয়ায় কার্যত বাতিল হয়েছে এক যুগ আগে। ওটাই এখন অবৈধদখল দারিত্বের মধ্যে রয়েছে। গত একযুগে যে অফিসের একটি টাকাও জমা হয়নি সরকারি কোষাগারে।

এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন গাড়িখানা রোডের (সাবেক চেম্বার অব কমার্স ভবন) পরিত্যক্ত এপি সম্পত্তির একটি ভবন ডিসিআর হিসেবে বন্দোবস্ত পেতে আবেদন করেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৮০ নাম্বার বারান্দী মৌজার ১৭ নাম্বার এসএ খতিয়ানের ৯৫ দাগে গাড়িখানা রোডের পরিত্যক্ত ভবনটির দ্বিতীয়তলা মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করে ডিসিআর দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল জেলা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সভায় ওই ভবনটি জেলা আওয়ামী লীগের অনুকুলে অস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়। বোর্ড সভার এক বছর আগেই দখলে যাওয়ায় ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে মাসিক ভাড়া ১ হাজার ৩শ’ ৩৩ টাকা করে প্রতি বছর জমা দিতে বলা হয়। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ডিসিআর বিধি অনুযায়ী অস্থায়ী বন্দোবস্ত হয় মাত্র এক বছরের। প্রতি বছর ডিসিআর কেটে নবায়ন করতে হয়। আর এক বছর ডিসিআর কেটে নবায়ন না করলে অটোমেটিক ওই ডিসিআর বাতিল হয়ে যায়।

অথচ জেলা প্রশাসন সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, ডিসিআর নেয়ার পর একটি টাকাও দেয়নি যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। সে হিসেবে ২০১৩ সাল থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের ডিসিআর বাতিল হয়ে গেছে। তারা কোনো মাসের ভাড়া দেয়নি। বিশাল আয়তনের এই ভবনটি মাসিক যৎ সামান্য ভাড়া ১ হাজার ৩শ’ ৩৩ টাকা হিসেবে ১২ বছরে সরকারের পাওনা হয় ১ লাখ ৯১ হাজার ৯শ’৫২ টাকা। কিন্তু গত এক যুগে একটি টাকাও দেয়া হয়নি সরকারি কোষাগারে। এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজস্ব বিভাগের কেউ যোগাযোগও করেননি। যে কারণে এক যুগেরও বেশি সময় ওই ভবনটি অবৈধ দখলদার হিসেবে রয়েছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ।

এ ব্যাপারে যশোরের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আরডিসি বিধান কান্তি হালদার বলেন, এই এপি পরিত্যক্ত সম্পত্তির ভবন বন্দোবস্ত বেশ পুরোনো। দেখা যাচ্ছে প্রায় ১২ বছর আগের। বিধি অনুযায়ী প্রতি বছরই ডিসিআর কাটতে হবে, নবায়ন করতে হবে। এক বছর বা ২/৩ বছর পর্যন্ত অনেকে একসাথে ডিসিআর কাটেন। তবে আওয়ামী লীগ অফিস টানা ১২ বছর ডিসিআর কাটেনি বা কোনো টাকাও জমা দেয়নি। কাজেই যে বছর বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তার পরের বছর টাকা জমা না দিলেই ডিসিআর বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। আর টাকা জমা না দিয়ে ১২ বছর ডিসিআর থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ওই ভবনটি যদি কেউ ব্যবহার করেন তারা অবৈধ দখলদার হিসেবই বিবেচিত হবেন।

এ ব্যাপারে এডিসি রাজস্ব সুজন সরকার বলেন, ওই ফাইল তাকে ভালোভাবে দেখতে হবে। আওয়ামী লীগ অফিসের ওই বন্দোবস্ত ফাইলটি আসলে কি অবস্থায় আছে খোঁজখবর নিয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারবেন। ডিসিআর সংক্রান্তে অন্য আরো কয়েকজন স্টাফ কাজ করেন। তারা এ ব্যাপারে তারাই তথ্য দিতে পারবেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, গোটা জেলায় অবৈধ দখলদার মুক্ত করার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগ অফিস পড়েছে। যেহেতু তারা গত ১২ বছর ডিসিআর এর ভাড়া প্রদান করেননি। এ কারণে তালিকায় তাদের নাম উঠে এসেছে। বিষয়টি তিনি আরো খোঁজ নেবেন বলে জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!