খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র দেশে ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিতের অন্যতম বাধা : সিপিডি
  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত
বন্ধ হচ্ছে মেলার বাজার নামে ১০ লক্ষাধিক টাকা আদায়

যশোরে দখলকৃত পুলিশ প্লাজার জমি ডিসির নামে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোর শহরে ব্যাপক আলোচিত পুলিশের দখলকৃত এক একর ২০ শতক জমি অবশেষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়েছে। এর মাধ্যমে জেলা পুলিশের প্রতি মাসে ১০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজির অবসান ঘটতে চলেছে। এরই মাধ্যমে শহরের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরের গাড়িখানায় এক একর ২০ শতক জমি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে পুলিশ প্রশাসনের ঠান্ডা লড়াই চলছিল। জমিটি খাস খতিয়ানের হলেও পুলিশ সেটি মানছিল না। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন মামলা করে। উচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন ২০১৬ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে পুলিশ রাতারাতি ওই জমি তাদের দাবি করে দখল করে নেয়। সেখানে থাকা সব দোকানপাট ভেঙে মালামাল নিয়ে যাওয়া হয় বলে দোকান মালিকরা অভিযোগ করেন। এরপর প্রাচীর দিয়ে যশোর পুলিশ শহরের প্রাণকেন্দ্রের এ মূল্যবান জায়গাটি দখলে রাখে। এখানে পুলিশ প্লাজা নাম দিয়ে প্রথম দিকে মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলা প্রতিমাসে তারা ইজারার নামে আদায় করতেন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সময়ের ব্যবধানে জায়গাটি স্থায়ী বাজারে পরিণত হয়। এখান থেকে তারা প্রতিমাসে গড়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা আদায় ও ভাগবাটোয়ারা করতেন। মেলার এ বাজার নিয়ে শহরের ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল। তারা মেলা বন্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। পুলিশের ভয়ে তারা তটচ্ছ ছিলেন।

এ নিয়ে দীর্ঘদিন দু’পক্ষের টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত পুলিশের সম্পত্তিটি খাস খতিয়ানে রেকর্ড হয়েছে। এখন গেজেট হওয়ার অপেক্ষা। আগামী দু’মাসের মধ্যে এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টে মামলার রায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে হওয়ায় তিনটি মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে কেবিনেট, স্বরাষ্ট্র ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, ওই জমি জেলা প্রশাসনেরই। এরপর কাগজ সেটেলমেন্ট অফিস সংগ্রহ করে চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু করে। যশোর সদর সেটেলমেন্ট অফিস সব ধরনের কাগজপত্র পাওয়ার পর নোটিশ টাঙিয়েছে। রাজস্ব কর্মকর্তা সামছুদ্দিন মজুমদার স্বাক্ষরিত ‘চূড়ান্ত স্বত্ত্বলিপি প্রকাশনের ইস্তাহার’ শিরোনামে ৮ সেপ্টেম্বর টাঙানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেহেতু উল্লেখিত মৌজার স্বত্ত্বলিপিতে ১৯৫৫ ইং সনের জমিদারি দখল ও প্রজাস্বত্ব নিয়মাবলীর ৩০ নং বিধি মোতাবেক সকল আপত্তি ও ৩১ নং বিধিমতে, সকল আপিল শুনানি সমাপ্ত হইয়া আদেশসমূহ তামিল হইয়াছে। উক্ত নিয়মাবলীর ৩২ নং বিধি মোতাবেক বর্তমান খাজনা দেখাইয়া চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা হইয়াছে। অতএব এতদ্বারা আপনাদিগকে অবগত করানো যাইতেছে যে, উল্লেখিত মৌজার চূড়ান্ত স্বত্ত্বলিপি সাধারণের পরিদর্শনের জন্য উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে ০৮.০৯.২০২৪ থেকে ০৭.১০.২০২৪ তারিখ পর্যন্ত খোলা থাকিবে।’ প্রদর্শনের এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর মূল্যবান ওই সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নামে অর্থাৎ এক নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ডের গেজেট প্রস্তুতের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে মাস খানেক সময় লাগতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের এসএ শাখার একজন কর্মকর্তা জানান। এরপর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হবে। তারপর জেলা প্রশাসন তাদের এক একর ২০ শতক জমি বুঝে নেবে বলে ওই সূত্র জানায়।

পুলিশের দখলকৃত ওই স্থানের ব্যবসায়ী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেছেন, ওই জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ৪০ টি পরিবার সেখানে বসবাস করতো। এছাড়া, তিনিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান চলেছে দীর্ঘদিন। আদালত থেকে তাদের পক্ষে ছিল স্টে অর্ডারও। অথচ আদালতের নির্দেশনা সত্বেও পুলিশ সেসময় সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কেবল তাই না, তাদের নামে বোমা হামলার মামলাও দেয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, তখন এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের ছেলের নামে ফেনসিডিলের মামলা দেয়া হয়। খুলনার ফুলতলা থেকে তাকে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে পুলিশ। যাদেরকে উচ্ছেদ করা হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন, বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, অ্যাড. গোপীনাথ, ফজলুর রহমান, শিবলু, শ্যামল মল্লিক ও সবুজ মল্লিক।

উল্লেখ্য, গেজেট প্রকাশের পর আলোচিত এবং মূল্যবান এই সম্পত্তির মালিক হবে জেলা প্রশাসন। তখন জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই সবকিছু পরিচালিত হবে। বন্ধ হয়ে যাবে পুলিশের অবৈধ মেলার বাজার নামে টাকা আদায়ের উৎস।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!