আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি যারা পবিত্র ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে যাবেন, তাদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) নিতে হবে। এ টিকা নিতে হবে যাত্রার ১০ দিন আগে। দুই দেশের বিমানবন্দরে টিকার সার্টিফিকেট দেখালেই মিলবে প্রবেশ ও বের হওয়ার ছাড়পত্র। নতুন এ নিয়ম চালু হলেও সরকারের পক্ষ থেকে টিকাকেন্দ্রিক কোনো তোড়জোড় দেখা যায়নি। ফলে অনেকেই ওমরাহ যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দিচ্ছেন। যাত্রীদের সঙ্গে দুশ্চিন্তায় রয়েছে হজ-ওমরাহ এজেন্সিগুলোও।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, যাত্রার আগে হজযাত্রীদের মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দুটি ফ্রি দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাজেট থেকে এসব টিকা দিয়ে থাকে। এতে হাজিপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। অন্যদিকে, ওমরাহ যাত্রীদের যাওয়া-আসার কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। সৌদি সরকার বা দূতাবাস এ নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানায়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে এ নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
সৌদি সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, ওমরাহ ও ভিজিট করতে আগ্রহীদের কোয়াড্রিভ্যালেন্ট নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এ ভ্যাকসিনের ধরন হতে হবে পলিস্যাকরাইড বা কনজুগেট। এ টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশে কোনো ওষুধ কোম্পানির কাছে এ টিকা নেই। এখন ওমরাহ যাত্রীদের জন্য এ টিকার সরবরাহ পর্যাপ্ত করতে হলে সরকারি মেডিকেল বা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা আমদানির অনুমতি দিতে হবে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ওমরাহ পালন করতে যে দুটি টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেগুলো কোথায় মিলবে, কত টাকা লাগবে— সে ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। টিকা আমদানির অনুমতি বা বিক্রির অনুমতি দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মোট কথা, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তাদেরকে টিকা কিনতে হবে, এটা নিশ্চিত। এখন এ টিকা কোথায় পাওয়া যাবে, কত টাকায় বিক্রি হবে তা ঠিক হবে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তহীনতায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন ওমরাহ যাত্রী ও এজেন্সিগুলো।
দুশ্চিন্তায় ওমরাহ যাত্রীরা
লালবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম। পরিবার নিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি তার সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার কথা। ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটাও শেষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এজেন্সির মাধ্যমে জানতে পারেন যে, যাত্রার ১০ দিন আগে তাকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিতে হবে। এ টিকার খোঁজ করতে গিয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। সবশেষ তিনি বিমানের টিকিট বাতিল করেছেন।
শুধু সাইফুল নয়, যারা এ বছর ওমরাহ করতে যাবেন তাদের সবাই টিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
হজ ও ওমরাহ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মক্কা-মদিনা হজ ট্যুর এজেন্সির ম্যানেজার মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘টিকা বাধ্যতামূলক, এ খবর জানার পর যারা ১০ ফেব্রুয়ারির পরে ওমরাহ করতে যাবেন, তাদের প্রায় সবাই ফোন দিচ্ছেন। আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না। অনেকেই টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারিতে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে বিমানগুলোর ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে টিকিট বাতিল করছেন।’
‘ওমরাহ করতেও টিকা নিতে হবে— সৌদি সরকার এমন ঘোষণা তিন মাস আগে দিলেও বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এজেন্সি যোগাযোগ করলে ধর্ম মন্ত্রণালয় দায় এড়িয়ে যায়।’
সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ফলে ওমরাহ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে— জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্সির মালিক। তিনি বলেন, ‘নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই ওমরাহ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। টিকা নিতে গিয়ে তারা নানা বিড়ম্বনায় পড়বেন।’
ওমরাহ হয় ব্যক্তি টু সৌদি সরকারের মধ্যে। সৌদি সরকার ভিসা দেয়, আর ব্যক্তি টিকিট কেটে চলে যান। এখানে মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখন টিকার ইস্যু সামনে আসতেই সবাই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। আমরা তো টিকা আমদানি বা বিক্রি করি না। এটি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
খুলনা গেজেট/এইচ