লনা মহানগরীর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত ময়ূর নদসহ এ নদ সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী, হাতিয়া নদীর ২২ কিলোমিটার খননপূর্বক নদটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। এ দাবিতে খুলনা শাখার উদ্যোগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি বুধবার (১৫ মে) বেলা ১টায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ শরিফ এর নিকট প্রদান করা হয়।
সংগঠনের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও খুলনা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদার স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সারা দেশের ন্যায় খুলনা অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিশেষত মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-জলাশয় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রুগ্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বলা চলে মৃত্যুর প্রহর গুণছে। অনেক নদী ইতোপূর্বে অস্তিত্ব হারিয়েছে। অনেক নদী বিশেষ করে নদীর সংযুক্ত খালসমূহ স্থায়ীভাবে মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। ভূমিদস্যু-জমিখেকো-লুটেরাদের প্রধান লক্ষ্য নদী-খাল-জলাশয়। যত্রতত্র, যথেচ্ছা অপরিকল্পিত নগরায়ন এ অমূল্য সম্পদ বিলীন হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
এতে আরো বলা হয়, খুলনা মহানগরীর পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়ূর নদসহ এ নদ সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী, হাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার, রয়েছে প্রায় ২২টি সংযুক্ত খাল। মূলত এখন আমরা এ নদটি খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বললেও রূপসা-ভৈরব এবং এ ময়ূর নদকে কেন্দ্র করেই খুলনা মহানগরীর গোড়াপত্তন। বড় শহর হিসেবে গড়ে ওঠার নেপথ্যে একসময়কার প্রশস্ত-খর¯্রােতা এ ময়ূর নদটির ভূমিকা ছিলো অনন্য। প্রচলিত আছে, সৌন্দর্যের কারণেই এ নদটির নাম ময়ূর হয়ে ওঠে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের নিকট আমরা এ নদটিতে লঞ্চ-স্টিমারসহ সবধরনের নৌযান চলাচলের কথা শুনতে পাই। ইতিহাসও তাই সাক্ষ্য দেয়। তৎকালীন খুলনা শহরে ধান, পাট, সুপারি, নারিকেল, কৃষিজাত পণ্য, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাঁচামাল গেঁওয়া, গোলপাতা, সুন্দরি, গরাণ, বাঁশ, মধু, মাছ প্রভৃতির একটা বড় অংশ এ নদের মাধ্যমে আসতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিক জনসংখ্যা, মানুষের স্বার্থপরতা, লোলুপ লেলিহান দৃষ্টি, অসচেতনতা প্রভৃতির ফলশ্রুতিতে এ নদটি এখন দু’পাড়ের বিশেষ করে খুলনা নগরবাসীর বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নেই কোনো প্রবাহ, জোয়ার-ভাটার লেশমাত্র। রূপসা নদীর সাথে এ নদটির মিলনস্থল বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা মৌজার আলুতলা নামক স্থানে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত স্লুইসগেট (১০ গেট) এর যথাযথ পরিচালনার অভাবে এ নদটির করুণদশা সৃষ্টির কাজটি আরও বেশি ত্বরান্বিত হয়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদ ও সংযুক্ত ক্ষেত্রখালী এবং হাতিয়া নদীর প্রায় ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মধ্য হতে ‘ময়ূর নদ’ নামীয় অংশ অর্থাৎ সাড়ে ৫ কিলোমিটর খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু একটি নদ বা নদীর আংশিক খনন করে সেটি পুনরুদ্ধার বা রক্ষা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে এ নদটি রক্ষা তো সম্ভবই নয়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনেও তেমন কোনো কাজে আসবে না বরং রাষ্ট্র তথা জনগণের অর্থ অপচয়ই হবে; যা ইতোপূর্বে প্রমাণিত।
এ নদটি খুলনা-যশোরের বিল ডাকাতিয়া হতে উৎপত্তি হয়ে ক্ষেত্রখালী/খুদিয়া নাম ধারণ করে খুলনা মহানগরীর বয়রা শ্মশানঘাট এলাকায় এসে ময়ূর নদ নাম ধারণ করে বটিয়াঘাটার বুড়ো মৌলভীর দরগাঁহ সংলগ্ন ত্রিমোহনীতে পুনরায় নাম পরিবর্তিত হয়ে হাতিয়া নাম ধারণ করে আলুতলা এলাকায় রূপসা নদীতে মিশেছে।
এ নদটি রক্ষায় পুরো ২২ কিলোমিটার এবং সংযুক্ত খালসমূহ একটি সমন্বিত প্রকল্পের আওতায় এনে খনন করে প্রবাহ তথা স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা নিশ্চিত করে, সংরক্ষণ করতে পারলে এ অঞ্চলের পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাসহ অর্থনৈতিক বিভিন্ন কর্মকা-ে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও খুলনা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাড. মোঃ বাবুল হাওলাদার, সংগঠনের সদস্য যথাক্রমে কবি, সংগঠক, পরিবেশবাদী কর্মী নাজমুল তারেক তুষার, কবি ও সংগঠক সৈয়দা তৈফুন নাহার, সমাজকর্মী শেখ নুরুল হুদা, মুক্তি আক্তার প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেডি