যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ নির্বাচনের দুইদিন আগে গভীর রাতে যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ কয়েক নেতার বাড়িতে সিরিজ হামলা চালানো হয়েছে। অফিস ও বাড়ি ভাঙচুরের জন্য ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করছেন বিএনপি নেতারা। এদিকে, বিকেলে শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্ত্বরে বিএনপির নির্বাচনী সমাবেশও করতে দেয়নি পুলিশ।
শনিবার রাত একটার পরই সিরিজ এই হামলা শুরু হয়। হামলার খবর পুলিশকে দেয়া হলেও তারা কোনো ভূমিকা পালন করেনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
যশোর জেলা বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সদর উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনা ঘটেছিল বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, ওই রাত দু্ইটার দিকে ২০/২৫ জন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল ও কারযোগে তার উপশহর বি-ব্লকের বাড়ির সামনে আসে। এ সময় তারা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং উপর্যুপরি ইটপাটকেল ছুড়ে বাড়ির জানালার গ্লাস ভেঙে দেয়। তাদের ছোড়া ইট ঘরের মধ্যেও চলে যায়। এসময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
অ্যাডভোকেট সাবু আরো জানান, ওইরাতে দলের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদস্য গোলাম রেজা দুলু, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুর বাড়ি এবং জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় কোতয়ালী থানার ওসিকে দুই দফা ফোন করি। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু জানান, রাত দুটার পরই তার বাড়িতে হামলা হয়েছে। দুটি কার ও ১০/১২টি মোটরসাইকেলযোগে এসে সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা ছাড়াও ‘ভোট করার মজা বুঝিয়ে দেয়ার’ হুমকি দেয়। তিনি জানান, বিষয়টি দলের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন কোতয়ালী থানার ওসিকে ফোনে জানিয়েছেন। ওসি তাকে বলেছেন, আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে। বিষয়টি দেখছি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, রাত আড়াইটার দিকে ২০/২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্বৃত্তরা বিএনপি কার্যালয়ে যায়। ওই সময় ভেতরে ভোটের পোস্টার বাধার কাজ করছিল কর্মীরা। দুর্বৃত্তরা দরজা লাথি মেরে ছিটকিনি ভেঙে ভেতরে ঢুকে কর্মীদের মারপিট ও ভাঙচুর করে। এরপর নির্বাচনের জন্য রাখা ভোটার তালিকাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ও নির্বাচনী মালামাল একটি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা দলীয় কার্যালয়ের দরজায় নতুন তালা ঝুলিয়ে দেয়। একই রাতে দলের সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের বাড়িতে ও সাবেক কাউন্সিলর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাজী আনিছুর রহমান মুকুলের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা রিটার্নিং অফিসার ও কোতয়ালী থানায় জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে, রোববার বিকেলে শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্ত্বরে নির্বাচনী সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। কিন্তু পুলিশ গিয়ে তাদের সমাবেশে বাধা দেয়। সমাবেশ করতে দেয়নি। জানায়, সড়কের ওপর সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পরে তারা বিএনপি কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলগুলোতে পুলিশ পাঠিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম