খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ কার্তিক, ১৪৩১ | ৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ড. ইউনূসকে প্রধান করে ১০ সদস্যের পরিকল্পনা কমিশন গঠন; প্রজ্ঞাপন জারি
  এলপি গ্যাসের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত বিকেলে

মণিরামপুরে দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরের মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির দুটি গ্রুপ বর্তমানে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। গত দু’দিনে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ দু’পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১৫/২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

এদিকে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে জেলা কমিটি। শনিবার জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মণিরামপুর উপজেলায় সাম্প্রতিক অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যা শনিবার থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

থানা পুলিশ ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেছেন, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে গত প্রায় তিনমাস মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। গ্রুপ দুটি হচ্ছে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন ও সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা। তাদের অনুসারী রয়েছেন উপজেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

সূত্রটি জানিয়েছে, উপজেলার দুটি গ্রুপের নেতাকর্মীদের প্রতিশোধ পরায়নতা, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মূলত এ দ্বন্দ্ব গত ৫ আগস্টের পর থেকে শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ বিরোধ তৃণমূল পর্যায়ে পৌছেছে। এরই জের ধরে গত বুধবার রাতে পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একটি ওয়াজ মাহফিলে ১০/১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাবপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান ভাঙচুর ও সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাংঙচুর করা হয়। এতে তাদের ৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে মুছা পক্ষের অনুসারীরা উপজেলা বাজারে শো-ডাউন ও অবস্থান নেন।
এরপর শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার পর বাজারে অবস্থান ও শো-ডাউন দেয় ইকবাল গ্রুপ। এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বাজারে কয়েকটি দোকান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ইকবাল গ্রুপ। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়। পরে ইকবাল পক্ষ ও মুছা পক্ষের নেতাকর্মীরা পৌরশহরে পাল্টাপাল্টি মিছিল বের করে। এতে পরিবেশ ফের উত্তপ্ত ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ছুটাছুটি শুরু করে। দোকানপাটও বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।

মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইকবাল গ্রুপ। তারা এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আগে যারা ছাত্রলীগ করতো এখন তারা বিএনপি নেতা ইকবালের ছেলের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। তারা গত বুধবার রাতে একটি মাহফিলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। ইকবাল গ্রুপের ছেলেরা যাদের সঙ্গে হাতাতাতি করেছে তারা আবার আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করে। সেই জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মিছিল বের করে তারা। মিছিল থেকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে। তারাই আবার শুক্রবার সকালে অবরোধ, মিছিল ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। ইকবাল গ্রুপের কর্মীরা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তাদের তাণ্ডবে পৌর শহরে বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা কমিটির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল বলেন, উপজেলা বাজারে গত দু’দিন ধরে যা হয়েছে, সব মুছার লোকজন করেছে। বাজারে বোমাবাজি করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তারই লোকজন। এমনকি শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটাতে চেয়েছিল তার লোকজন। সেটি প্রতিহত করতেই আমার লোকজন মাঠে ছিল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মুছা স্বয়ং উপস্থিত থেকে অন্যের জমি দখল ও গরু ছিনতাই করেছেন। পরের জমি দখল করে বিএনপির কার্যালয় করেছেন তিনি। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ সব মিথ্যা। তিনি আমার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করছেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মণিরামপুরে যত অপকর্ম ঘটছে, সেটা বিএনপি নেতা ইকবালের লোকজন করছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা বাজারে যা ঘটছে সেটাও ইকবালের সরাসরি ইন্ধনে হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এসব লিখিত আকারে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যশোরের একজন কেন্দ্রীয় নেতাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বেপরোয়া শহীদ ইকবাল কারো কথায় কর্ণপাত করছেন না।

মণিরামপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, কোনো পক্ষই এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ঘটনায় শহর উত্তপ্ত রয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেডি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!