কার্যাদেশ দেয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পরও খুলনার ভৈরব সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র সংক্রান্ত জটিলতার নিরসন হয়নি। ফলে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবনাও পাঠাতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেজন্য দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এই সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে পারছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
গত বছরের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২৬ নভেম্বর ২০২০ উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেজক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ড তৈরী করে সেতু তৈরীর ইকুইপমেন্ট স্টক করতে শুরু করে। কিন্ত সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, কেডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী।
কার্যাদেশ দেওয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পরও জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যায়নি। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মিলন বলেন, ১০ জানুয়ারী ২০২১ সওজের খুলনা কার্যালয় থেকে একযোগে কেডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্র প্রদানের বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত পত্রে উল্লেখ করা হয় দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া- গাজীরহাট-তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) ১ম কিলোমিটার ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার অন্তর্গত ৪ নং মহেশ্বরপাশা, ১৩ নং দেবনগর ১৪ নং দিঘলিয়া মৌজার ১৭ দশমিক ৪৯ একর ৭ দশমিক ০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। উক্ত কপির সংগে খুলনা সওজ কার্যালয় থেকে সংযুক্ত করে দেয়া হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়/সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ হতে ভূমির প্রশাসনিক অনুমোদন কপি, জিডিপি প্রশাসনিক অনুমোদন কপি, প্রস্তাবিত ভূমির নকশা কপি, মৌজা ম্যাপের কপি, মামলা সংক্রান্ত প্রত্যায়ন পত্র, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ডিটেইল এরিয়া প্লানের উপর চিহ্নিত অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার কপি, গুগল ম্যাপের কপি ও ব্রিজ স্থানের আউট প্লান। তিনি জানান, ইতিমধ্যে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছি। এখন কেডিএ এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেলে খুলনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ভৈরব সেতুর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা জমা দিতে আর কোন বাঁধা থাকবে না। তিনি আরো বলেন, ১০ মার্চ বুধবার এ ব্যাপারে কেডিএ কর্তৃপক্ষের সংগে আমাদের বৈঠক রয়েছে।
ভৈরব সেতু ছাড়পত্রের ব্যাপারে ৯ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এর চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাহবুবুল ইসলামের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর উচিত ছিল ভৈরব সেতুর প্রস্তাবনা তৈরি করার আগেই ছাড়পত্র নেওয়ার। এখন ছাড়পত্র দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইনের বাইরেতো আমরা কিছু করতে পারবো না।”
এদিকে জমি অধিগ্রহণ, কেডিএ এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পেলেও চলতি মাসের মধ্যে ভৈরব সেতুর ২৫ নং পিলার এর টেষ্ট পাইলিং (দেয়াড়া ঈদগাহের মধ্যে) এর কাজ করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভৈরব সেতু প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার অধিকারী।
ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে নদীর পশ্চিম সাইড অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান আকাংখা গোডাউন থেকে রেলিগেট খেয়াঘাট পর্যন্ত। ১৬ থেকে ২৮ নং পিলার নদীর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার বানিয়াঘাট ফেরিঘাট সংলগ্ন থেকে কুকুরমারা পর্যন্ত। নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভীতরে ১৫ নং পিলার এবং নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভীতরে ১৬ নং পিলার বসবে। নদীর ভীতর কোন পিলার বসবে না। এছাড়া A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। ভৈরব সেতুর মেয়াদকাল ২৪ মাস অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের ভেতর সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে হবে।