খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩১৬
অবৈধ অভিবাসন

ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশের তালিকায় যোগ করল যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ সুবিধা বাতিল সুইজারল্যান্ডের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই)। এটি এমন একটি তালিকা, যেখানে উল্লেখিত দেশগুলো প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সহযোগিতা করে না বলে মনে করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এই তালিকায় ভারত ছাড়াও রয়েছে ভুটান, কিউবা, ইরান, পাকিস্তান, রাশিয়া এবং ভেনেজুয়েলা। আইসিই জানিয়েছে, এই দেশগুলো সাক্ষাৎকার গ্রহণ, সময়মতো ভ্রমণ নথি ইস্যু এবং নির্ধারিত ফ্লাইটে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রত্যর্পণের মুখে ১৮ হাজার ভারতীয়
আইসিই’র তালিকা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪ লাখ ৫০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার অভিবাসীই ভারতীয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় ৯০ হাজার ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টাকালে আটক করা হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এদের অধিকাংশই পাঞ্জাব, গুজরাট এবং অন্ধ্র প্রদেশের বাসিন্দা।

বৈধতার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা
অনেক ভারতীয় অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অবস্থান বৈধ করার চেষ্টা করলেও এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। বৈধতার আবেদনে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে।

অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যায় ভারত সবার ওপরে নয়। ২ লাখ ৬১ হাজার অবৈধ অভিবাসী নিয়ে শীর্ষে রয়েছে হন্ডুরাস, এরপর গুয়াতেমালার রয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার অবৈধ অভিবাসী। এশিয়ার মধ্যে চীন ৩৭ হাজার ৯০৮ জন অভিবাসী নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, আর ভারত রয়েছে ১৩তম স্থানে।

কার্যকর হবে কঠোর অভিবাসন নীতি
যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী এক মাসের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন নীতি কঠোর করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া পরিচালনার পরিকল্পনা করেছেন। এর ফলে, চূড়ান্ত আদেশপ্রাপ্ত হাজার হাজার ভারতীয় অভিবাসীকেও ফেরত পাঠানো হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, ভারতের জন্য বরাদ্দ বিশেষ সুবিধা ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ বা এমএফএন তকমা বাতিল করেছে সুইজারল্যান্ড। সুইস সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য সুইজারল্যান্ডে কর হার আবারও ১০ শতাংশে ফিরে যাবে। এর আগে ২০২১ সালে এই হার ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি নেসলের এক মামলার জেরে সুইজারল্যান্ড ভারতকে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (এমএফএন) মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ যখন অন্য একটি দেশকে ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (এমএফএন) মর্যাদা দেয়, তখন সেই দেশের জন্য শুল্ক ও বাণিজ্য নীতিতে বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সুইজারল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি (ডাবল ট্যাক্স অ্যাভয়ডেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট বা ডিটিএএ) বিদ্যমান, যার উদ্দেশ্য হলো সুইজারল্যান্ডে কাজ করা ভারতীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই আয়ের জন্য দুই দেশে কর দিতে বাধ্য না করা। এই চুক্তি প্রথম স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৪ সালে এবং পরে ২০১০ সালে সংশোধিত হয়। চুক্তিটি উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মূলত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি (ডিটিএএ) কার্যকর করতে নতুন বাধা তৈরি করে। ওই মামলায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি নেসলে একটি পক্ষ ছিল। ভারতীয় শীর্ষ আদালত রায়ে জানায়, ভারতীয় আয়কর আইনের ৯০(১) ধারা অনুযায়ী, সরকারের প্রজ্ঞাপন ছাড়া কোনো দ্বৈত কর নিরসন চুক্তি কার্যকর হতে পারে না।

এরপর, সুইজারল্যান্ডের ফাইন্যান্স বিভাগ গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ঘোষণা দেয়, তারা ভারতকে প্রজ্ঞাপন ছাড়া আর ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (এমএফএন) সুবিধা দেবে না। ফলে, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ভারতের জন্য এমএফএন সুবিধা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বছরের মার্চে আইসল্যান্ড, লিচটেনস্টেইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ইএফটিএ) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় আগামী ১৫ বছরে ভারতে ১০ হাজার কোটি বা ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশগুলো। তবে সুইজারল্যান্ডের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কারণে এই সম্ভাব্য বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে সুইস সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমার ধারণা, ইএফটিএ-এর কারণে আমাদের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি পুনরায় আলোচনা করা হবে। এটি একটি দিক। অন্যটি হলো মোস্ট ফেভারড নেশন। এ বিষয়ে আপাতত আমার কাছে কোনো আপডেট নেই। আমরা পরে বিস্তারিত জানাব।’

সূত্র: এনডিটিভি

খুলনা গেজট/এএজে, টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!