খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভিসা আবেদনের জন্য মার্কিন দূতাবাসে গেছেন খালেদা জিয়া
  ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশে এমন উন্মাদনা দেখতে চাই না : মির্জা ফখরুল
নিত্য পণ্যের লাগাম টেনে ধরা যায়নি

বিদায়ী বছর কষ্টে কেটেছে নিম্ন-মধ্যবিত্তের

সাগর জাহিদুল

নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২২। বিদায়ী বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। তার কষাঘাতে নিস্পেষিত হয়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।

সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। সরবরাহের ঘাটতি দেখিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা। একের পর এক দাম বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। লাগামহীন দামে নাভিশ্বাস ওঠে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের।

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ফলের সংকটের কথা জানিয়ে বাড়ানো হয় তেলের দাম। টিসিবির বাজার দর হিসেবে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১ লিটার সয়াবিন (বোতল) ১৫০ টাকা, আর ৫ লিটারের বোতল ছিল ৭২০ টাকা। এক বছরের মাথায় এসে একই পরিমাণ তেলের দাম দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৯০ ও ৯২০ টাকায়। বাধ্য হয়ে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়, তারপরও দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা যায়নি।

বছরের শুরুতে এসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হয়। আমদানি বন্ধ হয়ে যায় গম। কারণ গমের একটি বৃহৎ অংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। যুদ্ধের প্রভাবে সেখান থেকে গম আমদানি বিঘ্নিত হয়। গমের জন্য বাংলাদেশ ভারতমুখী হলেও তারা আমাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিছুটা সংকট দেখা দেয় গমের, যে কারণে বাড়তে থাকে দাম। ২০২১ সালে টিসিবির হিসেব অনুযায়ি দেশে খোলা ও প্যাকেট আটার দাম ছিল ৩৪ ও ৪০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এসে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। ক্রেতাকে বর্তমানে আটা খোলাটা ৭০ ও প্যাকেট ৭৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পায়। কলকারখানার মূল রশদ হল জ্বালানি তেল। এর প্রভাবে দেশের ১৬ টি চিনির মিল থেকে ৮ টি বন্ধ হয়ে যায়। চালু হওয়া মিল থেকে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে আমদানি করতে হয় চিনি। বড় বড় ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে চিনির বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তা বাড়িয়ে দেয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসেব অনুযায়ি এক বছরে ৭৫ থেকে ১১৫ টাকায় বেড়ে দাড়িয়েছে চিনির কেজি।

বছর জুড়ে লাগামহীনভাবে বাড়তি ছিল চালের বাজার। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করে। কিন্তু সেখানেও সফল হওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা ভরা মৌসুমে কম দামে ধান কিনে মজুত করে রাখে। পরে তা চাল বানিয়ে বিক্রি করে চড়া মূল্যে। ২০২১ সালে মিনিকেট সরু ৫৯ টাকা ও মাঝারি মানের চাল ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে একই চাল বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৭০ ও ৬৪ টাকায়।

বিদায়ী বছরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়েছে ডালের দামও। এক বছরের ব্যবধানে দেশী ও আমদানিকৃত ডালের দাম ১০৫ ও ৮৮ টাকা থেকে বেড়ে যথাক্রমে ১৪০ ও ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুলনার ব্যবসায়ীরা বলেছেন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে এ পণ্যটির দাম।

খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের সাবেক শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার দুষ্টচক্রের কবলে পড়েছে। ভোক্তাকে জিম্মি করে এসব ব্যবসায়ী নানা ধরনের সুবিধা নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতার সুযোগে বাজারে এই চক্রের আধিপত্য চলছেই। তারা বিভিন্ন সময়ে পণ্যের সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ফায়দা লুটছে। তাই বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমার পরও এর সুফল পাচ্ছেন না দেশের সাধারণ জনগণ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!