খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাসা থেকে ২ সন্তানসহ বাবা-মায়ের মরদেহ উদ্ধার
  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭

বাড়ি ফিরেছেন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র অতিরিক্ত ক্যাপ্টেন মুনসুরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর হতাশার অবসান ঘটিয়ে ও যুদ্ধক্ষেত্র মাড়িয়ে বুধবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরার নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের অতিরিক্ত ক্যাপ্টেন মুনসুরুল আমিন খান গিনি (৩৬)। এ যেন ঘন আঁধারের মধ্যে হঠাৎ চাঁদের আলো দেখতে পাওয়া। সাতক্ষীরার শহরের নারকেলতলার ‘এখানেই নোঙর’ বাড়িটি যেন আলো ঝলমল করে উঠলো তাদের নাবিক সন্তান গিনির উপস্থিতিতে।

দুই মাস থেকে আট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে অবস্থানকারি ২৯ জন নাবিকের একজন রাশিয়ার বোমা হামলায় প্রান হারিয়েছেন, আর ফিরে এসেছেন বাকি ২৮ জন। তাদেরই একজন সাতক্ষীরা শহরের নারকেলতলা এলাকার নুরুল আমিন খান ওরফে সেলিম খানের নাবিক পুত্র মনসুরুল আমিন খান গিনি।

বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের অতিরিক্ত ক্যাপ্টেন মুনসুরুল আমিন খান গিনি বলেন, ২ মার্চ স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরনে কেঁপে উঠি আমরা। উপরে গিয়ে দেখি বিস্ফোরন হয়েছে। ধোয়া উড়ছে, আগুন জ্বলছে। আমরা দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও ততক্ষনে হারিয়েছি আমাদের সহকর্মী এক নাবিককে। তাকে রেখেই আমাদের দেশে ফিরতে হলো। ইউক্রেনে অলিভিয়া বন্দরে নোঙর করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকরা জাহাজ থেকে দ্রুত নেমে আসেন। এরপর এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। স্থানীয়ভাবে একটি বোট এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপদ স্থানে রাখার পর আরও নিরাপত্তার জন্য তাদের রাখা হয় বাংকারে।

‘আমরা আগুন দেখেছি, জাহাজ বিধ্বস্ত হতে দেখেছি, আমরা মৃত্যু দেখেছি’ এমন মন্তব্য করে মনসুরুল আমিন খান গিনি আরো বলেন, ‘সে দৃশ্য ভয়াবহ। চারদিকে বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোয়ার কুন্ডলী। চোখে কোন হতাহত না দেখলেও আমাদের আতংকের শেষ ছিল না। বাড়িতে মাঝেমধ্যে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আতংক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। তবু ভরসা ছিল একদিন বাড়ি ফিরবোই’।

মনসুরুল আমিন খান আরও বলেন, শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার, শিপিং কর্পোরেশন এবং সর্বোপরি রোমানিয়া দূতাবাসের আন্তরিক চেষ্টায় আমরা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। পরিবারে ফিরে এখন স্বস্তি লাগলেও দুঃখ থেকেই যাচ্ছে আমরা এক সহকর্মীকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারিনি।

মনসুরুল আমিন খানের বাবা বিএডিসির সাবেক কর্মকর্তা নুরুল আমিন খান ও মা মর্জিনা খানম ছেলেকে কাছে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তার স্ত্রী আশরুকা সুলতানা ও তিন সন্তান ছেলে ফাহিমি, ফারহান এবং কনিষ্ঠ ছেলে ফারদিনের চোখেমুখে হাসি ফুটে উঠছে প্রিয় স্বামী ও বাবাকে কাছে পেয়ে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!