খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

প্রাণঘাতী ডেথ ক্যাপ মাশরুমের প্রতিষেধক আবিষ্কার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রাণঘাতী ডেথ ক্যাপ মাশরুমের (অ্যামানিটা ফ্যালোয়েডস) সম্ভাব্য প্রতিষেধক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রতি বছর বিষাক্ত মাশরুম খেয়ে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই ডেথ ক্যাপ মাশরুম।

মাত্র ছয় ইঞ্চি বড় হওয়া এমন মাশরুমের উপরের অংশ হলদে-সবুজ হয়ে থাকে। খেতে বেশ সুস্বাদু লাগে। এমনটি জানিয়েছেন অসাবধানতায় বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুমের কিছু অংশ খেয়ে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা। এটি খাওয়ার পর বমি, খিঁচুনি, লিভারের ভয়াবহ ক্ষতি এবং মৃত্যুও হতে পারে। এই মাশরুশের অর্ধেকটি খেলেই এর বিষে একজন পূর্ণ রয়স্ক মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত।

রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস ৫৪ খ্রিস্টাব্দে এই মাশরুম খাওয়ার কারণে মারা যান বলে ধারণা করা হয়। ১৭৪০ সালে রোমান সম্রাট ষষ্ঠ চার্লসও মারা যান এই মাশরুম খেয়ে। প্রচলিত রয়েছে যে বহু শতাব্দী ধরে ‘রাজাদের হত্যাকারী’ হিসেবে পরিচিত পায় এই বিষাক্ত মাশরুশ। এবার এটি তার সেই খেতাব হারাতে যাচ্ছে।

চীনা গবেষকরা সম্প্রতি একটি সম্ভাব্য প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছেন। এই রাসায়নিকটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ইন্ডোসায়ানাইন গ্রিন। আর ডেথ ক্যাপের বিষের নাম আলফা-অ্যামানিটিন।

মাশরুশটি খাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে আলফা-অ্যামানিটিন মানুষের শরীরের কোষের ভেতর ঢুকে পরে। তবে সময়মতো প্রতিষেধকটি খেতে পারলে তা কোষে অনুপ্রবেশকে রুখে দেয় এবং চূড়ান্ত বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পায় মানুষ।

দলটি ১৬ মে প্রকৃতি ও স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশনকে এই ফলাফলগুলো জানিয়েছে।

জার্মানির মারবার্গে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোবায়োলজির প্রাকৃতিক বস্তুকণাবিষয়ক রসায়নবিদ হেলজ বোড জানিয়েছেন, প্রতিষেধকটি দুর্দান্ত। আলফা-অ্যামানিটিন সত্যিই আমাদের প্রকৃতিতে থাকা সবচেয়ে বিপজ্জনক যৌগগুলোর মধ্যে একটি।

মানুষের ওপর বিষক্রিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও ডেথ ক্যাপের বিষক্রিয়া আক্রান্ত মানুষকে খুঁজে পাওয়া ও তার ওপর আবিষ্কৃত রাসায়নিকটি সময়মতো প্রয়োগ করা খুবই অসাধ্য কাজ।

চীনের গুয়াংজুতে সান ইয়াত-সেন ইউনিভার্সিটির ঔষুধ উন্নয়নবিষয়ক গবেষক কিয়াওপিং ওয়াং এবং গুওহুই ওয়ান, এ বিষয়ে গবেষণা শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেন।

বিজ্ঞানীরা জেলিফিশের বিষের প্রতিষেধক খুঁজে বের করার জন্য কয়েক বছর আগে ওয়াং এবং অন্যরা যে পদ্ধতিটি তৈরি করেছিলেন তা ব্যবহার করেছিলেন। তারা প্রথমে মানব কোষের একটি অংশ তৈরি করেন। পরে মিউটেশনের মাধ্যমে এদের কোষগত পরিবর্তন-পরিমার্জন আনার পর পরীক্ষা করে দেখেন কোন কোন কোষ বিষাক্ত আলফা-আমানিটিনকে রুখে দিতে পারে।

ইন্ডোসায়ানাইন গ্রিন দিয়ে চিকিত্সা করা ইঁদুরের মাত্র ৫০ শতাংশ আলফা-অ্যামানিটিনের বিষক্রিয়ায় মারা যায়। সেসব ইঁদুরের চিকিত্সা দেয়া যায়নি তাদের ৯০ শতাংশই মারা গেছে।

চেক প্রজাতন্ত্রের চেস্কে বুদেজোভিসে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন বোহেমিয়ার টক্সিকোলজিস্ট জিরি প্যাটোকা বলেন, প্রতিষেধক খুঁজে বের করার জন্য গবেষকরা এই পদ্ধতি নিয়ে অনেক আশাবাদী ও আন্দোলিত, এটি অত্যন্ত আধুনিক পদ্ধতি।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষুধবিষয়ক ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি ইতিমধ্যে আবিস্কৃত ইন্ডোসায়ানাইন গ্রিন নামের এই ড্রাগটি ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে। তারা জানিয়েছে রাসায়নিকটির নির্দিষ্ট ডোজগুলো মানব দেহের জন্য নিরাপদ।

পর্তুগালের পোর্তো ইউনিভার্সিটির টক্সিকোলজিস্ট ফেলিক্স কারভালহো বলেছেন, এই গবেষণায় আক্রান্তের সময় খুবই মুখ্য হবে। গবেষকরা প্রাণীদের আলফা-অ্যামানিটিনের সংস্পর্শে আসার চার ঘণ্টা পর থেকে ইঁদুরকে ইন্ডোসায়ানাইন গ্রিন দিয়ে চিকিত্সা করেছিলেন। তবে বেশিরভাগ লোকেরা যারা ডেথ ক্যাপ খেয়ে ফেলেছেন তারা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও হাসপাতালে যান না। এর পর যখন ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হন ঠিক তখনই চিকিৎসা পেতে ছোটেন। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঠিক সময় গবেষণার আওতায় আনা যাচ্ছে না। সূত্র: নেচার।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!