খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

প্রতিবন্ধিতা দমাতে পারেনি মৎস্য চাষী কৌশিক বাগচিকে

এম এম আসিফ

জন্মের পর সব কিছু ঠিকই ছিল। আর দশজন শিশুর মতো দৌড়-ঝাপ এবং খেলাধুলাও করেছেন। কিন্তু মাত্র ৬ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনা বদলে দেয় জীবনের গল্প। সেই দুর্ঘটনায় শরীরের এক পাশ হয়ে যায় অকেজো। এরপর শুরু হয় নানা সংগ্রাম। চিকিৎসার পর শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলেও ডান হাত ও পা অনেকটা অকেজো থেকে যায়। তবে মনোবল হারাননি। নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করেছেন তিনি। নিজেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। শূন্য থেকে শুরু করে এখন তিনি পেয়েছেন বিভাগের শ্রেষ্ঠ সফল মাছ চাষির স্বীকৃতি। তিনি হলেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৌশিক বাগচি।

শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী কৌশিক বাগচি ডান পা টেনে টেনে হাঁটেন। আর ডান হাতে ভারী ও শক্ত কিছু ধরতে কষ্ট হয় তার। এ অবস্থায় ছোট থেকে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে লেখাপড়া চলাকালীন ৬১ শতক জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ৭টি মাছের ঘের। এখন তিনি একজন সফল মাছ চাষি।

চিংড়ি চাষে অভাবনীয় সফলতা তার। এখন তার মাস গেলে আয় হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া মাছ চাষের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে পেয়েছেন সফল মাছ চাষির পুরস্কার। এখন আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় না তার। বরং তিনি অন্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। অনেকেই তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষ করছেন।

ডুমুরিয়ার মৎস্য চাষি কৌশিক বাগচি বলেন, ৬ বছর বয়সে আমার একটি দুর্ঘটনা ঘটে। তখন শরীরের এক পাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হই। ডান পাশের হাত-পা অনেকটা অকেজো হয়ে যায়। আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাই। ভাবতে থাকি আমার এই অবস্থায় কেউ আমাকে চাকরি দিবে না।

সে কারণে ছোট থেকেই আমি মাছ চাষের স্বপ্ন দেখি। মাছ চাষে সফল হব- এমনটা ভেবেই লেখাপড়া চলাকালে ১৯৯৭ সালে আমি মাছ চাষ শুরু করি। ৬১ শতক জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। এখন আমার ঘেরের জমির পরিমাণ ১৬ বিঘার মতো। যেখানে ৭টি মাছের ঘের রয়েছে। যার মধ্যে গলদা ঘের ৫টি এবং সেমিইন্টেন্সি বাগদা ঘের ২টি। এর অধিকাংশই আমার নিজের জমি। সামান্য জমি লিজ নেওয়া আছে।

তিনি বলেন, মাছ চাষে আমার মাসে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা যা একজন চাকরিজীবীর পক্ষে সম্ভব না। ২০১৩ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে মাছ চাষে পুরস্কারও পেয়েছি। সেই সঙ্গে ঘেরগুলোতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছি। এখানে যারা কাজ করে তাদেরও স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। আমার পরামর্শ নিয়ে অনেকেই মাছ চাষে লাভবান হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আরও বেশি উপকৃত হবেন বলে তিনি আশাবাদী।

ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কৌশিক বাগচি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী একজন মাছ চাষি। তিনি একজন শিক্ষিত ব্যক্তি। তবে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তেমন কোন কাজ পাচ্ছিলেন না। পড়াশোনা করেও চাকরিতে যেতে পারেননি। তাকে মাছ চাষে আগ্রহী করে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মাছ চাষে নানা প্রকার কলাকৌশল সম্পর্কে জানাই।

প্রথমদিকে তিনি ছোট পরিসরে একটি ঘেরে মাছ চাষ শুরু করে। এখন তার ৭টি ঘের রয়েছে। তিনি চিংড়ি চাষে আগ্রহী এবং উদ্যোক্তা বলা যায়। গত দুই বছর তিনি চিংড়ি চাষে অভাবনীয় সফলতা লাভ করেন। আমরা গত বছর পুরস্কারের জন্য মৎস্য অধিদফতরে তার নাম পাঠিয়েছিলাম। তবে করোনার কারণে হয়নি। এ বছরও তার নাম পাঠানো হয়েছে। এ বছর তিনি মাছ চাষে পুরস্কার পাবেন বলে আশা করছি।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!