কোন এক গ্রামে বাস করতো এক গরিব বুড়ি। রাতে ভাত খাওয়ার পরে কিছু ভাতে পানি দিয়ে রাখতো সকালে খাওয়ার জন্য। গ্রামের সবাই তাকে পান্তা বুড়ি বলে ডাকে। বুড়ি তাতে কিছু মনে করে না। বুড়ির সুখেই দিন যাচ্ছিল। কয়েকদিন ধরে এক চোর এসে সব পান্তা ভাত খেয়ে যায়। সকালে বুড়ির উপোস থাকতে হয়। একদিন চললো রাজার বাড়ি বিচার দিতে। পথে দেখা হলো শিং মাছের সাথে। সে বললো,
: ও বুড়ি কই যাও?
: চোরে আমার পান্তা ভাত খেয়ে যায়, তাই রাজার কাছে বিচার নিয়ে যাচ্ছি।
: যাও, ফিরে যাওয়ার সময় আমার সাথে দেখা করে যেও।
: ঠিক আছে।
বুড়ি হাঁটতে থাকলো। পথে দেখা হলো বেল ফলের সাথে, সেও একই কথা বললো। এভাবে দেখা হলো গোবর ছোট এক টুকরা কাঠের, চাকু ও চুনের সাথে। সবাই বুড়িকে একই কথা বললো। বুড়ি হাঁটতে হাঁটতে এক সময় রাজ দরবারের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। গেটের সেপাই বুড়িকে বললো,
: কাকে চাই?
: রাজাকে।
: কেন?
: বিচার দিতে।
: কিসের বিচার?
: চোরে আমার পান্তা ভাত খেয়ে যায় তাই।
: রাজাতো দরবারে নেই।
কি আর করা। এক বুক দুঃখ নিয়ে এলো।
চুন বুড়ির মন খারাপ দেখে বললো
: ও বুড়ি তোমার মন খারাপ কেন?
: রাজা বাড়ি নেই।
: আমাকে নিয়ে চল। একে একে সবাই বললো তাকে নেওয়ার জন্য। বুড়ি সবাইকে বয়ে নিয়ে এলো। তারপর রাতে ভাত খাওয়া শেষ হলে চুন বললো,
: আমাকে পান্তা ভাতে হাড়িতে রাখ।
শিং মাছ বললো,
: কলসিতে রাখ।
বেল বললো,
: আমাকে চুলার মধ্যে রাখ।
কাঠ বললো,
: আমাকে দরজার উপরে বেঁধে রাখ।
গোবর বললো,
: আমাকে দরজার নিচে রাখ।
চাকু বললো,
: আমাকে ঘাসের মধ্যে রাখ।
সবাই বুড়িকে ঘুমাতে বললো।
গভীর রাতে চোর এসে যেই ভাত খেলো ওমনি চুনে গাল পুরতে শুরু করলো। কলসিতে হাত দিতেই শিং মাছ কাটা মারল। ছুলার আগুনে হাতে ছ্যাকা দিতে গেলে বেল ফুটে চোখ কানা হয়ে গেল। বের হতে গিয়ে কাঠে বাড়ি খেয়ে পড়ে গোবর মেখে গেল। ঘাসে মুছতে গিয়ে কেটে রক্ত বের হল। চোর আর কোন দিন পান্তা খেতে আসেনি। বুড়ি শান্তিতে দিন কাটায়।
খুলনা গেজেট/কেএম