সাতক্ষীরার তালায় পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্পের বকেয়া ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৪৭ জন জমির মালিক। টিআরএম ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা তাদের ক্ষতি পূরণের দাবি আদায়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা গণস্বাক্ষরকৃত কপি পানি সম্পদ মন্ত্রালয়ের সচিব ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করেছেন।
জানা যায়, তালা উপজেলাধীন কপোতাক্ষ নদ অববাহিকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ২০১১-১২ অর্থ বছরে পাখিমারা বিলের চারিপাশে ১২ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে শেষ করে। এসময় ভূমি অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ২০১১ সালে টিআরএম প্রকল্প চালু করে সরকার। যথারীতি নদী খনন ও টিআরএম চালু হলেও ২০১১-২০১২ সালের ২ বছরের ক্ষতিপূরণের টাকা ৭৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের প্রদান করা হয়। ১ম প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০-২১ এবং ২য় পর্যয়ের প্রকল্প ২০২০-২১ হতে ২০২৩-২৪ নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে টিআরএম প্রকল্প চালু থাকলেও বাকী ২০১৩ সাল হতে অদ্যবদি ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে বাকী অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হয়নি।
এদিকে তালার কপোতাক্ষ নদের স্রোতধারা বাস্তবায়নে (টিআরএম) গৃহীত প্রকল্পের ক্ষতি পূরণের বকেয়া টাকা গত ১০ বছরেরও না পাওয়ায় ফুসে উঠেছে টিআরএম এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা বলেন, কপোতাক্ষ অববাহিকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত টিআরএম প্রকল্প বর্তমানে চালু রয়েছে। কিন্তু আমরা প্রায় ২৫ শতাংশ জমির মালিক এখনো আমাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। বর্তমানে আমরা অত্যন্ত দূরাবস্থায় আছি। নিজেদের জমি থাকা সত্বেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ফলে আমরা জমির মালিকরা অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি।
তারা বলেন, আমাদের অনেকের ১৫-২০ বিঘা জমি থাকলেও অর্থের অভাবে জীবনবাজি রেখে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। মানুষের ক্ষেতে কামলা দিতে হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। শুনেছি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছেন। একনেকে পাশ হয়েছে। কিন্তু এসব শুধু স্বপ্নে দেখার মতো। আমরা কোন ক্ষতি পূরণ পাচ্ছি না। সেই জন্য এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা মিলে গণস্বাক্ষর দিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আাবেদন করেছি।
জমির মালিকরা আরও জানান, গত ২০১১-১২ সালের আমাদের জমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে ১২ রকমের কাগজ জেলা প্রশাসকের এল এ শাখায় জমা দিতে হয়। কাগজ করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এর পরে বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে অর্থ দিয়ে টাকা নিতে হয়েছে। আসলে আমরা বর্তমানে নিরুপায় হয়ে গণস্বাক্ষর প্রদান করে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠালাম। আশা করছি আমাদেরও দাবি পূরণ হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, তালার টিআরএম ক্ষতিগস্ত কৃষকরা তাদের ক্ষতি পূরনের দাবি আদায়ে একটি গণস্বাক্ষরকৃত আবেদন আমার কাছে দিয়েছেন। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম