খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ
  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার

পাকা ধান গোলায় তুলতে কৃষকের দুশ্চিন্তায় ‘ঝড়-বৃষ্টি’

সাজ্জাদুল ইসলাম

বৈশাখের শুরু থেকেই বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা। তপ্ত রোদ্রের দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠছে সব বয়সী মানুষের। হৃদয় শীতল করা এক পশলা বৃষ্টি সকলের চাওয়া হলেও, কৃষেকর কাছে এই সময়ে ঝড়-বৃষ্টি ‌পাকা ধানে মই দেওয়ার মত অবস্থা হয়ে দাড়াবে। তাই মাঠের ফসল ঘরে তোলার এই মোক্ষম সময়ে বৃষ্টি ও বৈশাখী ঝড় তাদের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলা সোনালী ধানের ফলন দেখে স্বপ্ন বুনছেন অধিকাংশ কৃষক। মাঠের পাকা ধান গোলায় তুলতে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ ধান কাটছে, কেউ আটি বাঁধছে, কেউ আটি মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে ধান মাড়াইয়ের স্থানে।

তেমনই একজন কৃষক লবনচরার আমতলা এলাকার মোতালেব মিয়া। কাঠফাটা রোদে ছয় জন কৃষাণ নিয়ে ৩৩ শতকের ছয় বিঘা জমির ধান কাটতে ব্যস্ত তিনি। গত পাঁচ দিন থেকে ধান কাটছেন তিনি। বলছিলেন ইরি ৭৮ ও হীরা দুই জাতের ধান লাগিয়ে ছিলেন তিনি। আজকেই শেষ হয়ে যাবে তার ধান কাটার কাজ। এর পর শুরু হবে মাড়াই। সব কিছু ঠিক থাকলে আশা করছেন ছয় বিঘা জমিতে ১২০ মণ ধান পাবেন। আর এ বছর ধানের চাহিদা বেশি থাকায় প্রতি মণ ৯০০ টাকা দামে বিক্রির ইচ্ছা তার।

দক্ষিণ মোল্লাপাড়া এলাকার আরেকজন কৃষক সুরমান মোল্লা। তিনি জানালেন, চলতি মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে ইরি-২৮ ও ইরি-৫৮ দুই জাতের ধান লাগিয়েছেন তিনি। কৃষাণের দাম বেশি থাকায় একাই কাটছেন নিজের জমির ধান। বলছিলেন, বৈশাখের ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। চলতি মাসের শুরুতে বৈশাখী ঝড়ে তার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর এখন যদি ধান ঘরে তোলার আগে ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয় তাহলে মাঠে মারা পড়বেন তিনি।

এই মাঠের আরেকজন কৃষক ইউসুফ মোল্লা। বৈশাখের ঝড়বৃষ্টির ভয়ে গত ১৩ তারিখ থেকে ধান কাটা শুরু করেন তিনি। অধিকসংখ্যক কৃষাণ কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সাত বিঘা জমির ধান কেটে, মাড়াই করে গোলায় তুলেছেন তিনি। সাত বিঘা জমিতে হীরা জাতের ধান পেয়েছেন ১৪০ মণ। আশা করছেন এবারে প্রতি মণ ধান ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবেন, সেই সাথে ধানের খড় বিক্রি করবেন প্রতি আটি ২৫০০ টাকায়।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বীজতলা থেকে শুরু করে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পুরো মৌসুমই সেচের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারপরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার খুলনা জেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন।

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায়, ধানের ফলন ভালো হওয়ায়, ধানের ভালো দামের আশায় বুক বাধছেন কৃষকেরা। তবে কালবৈশাখীর তান্ডব, কৃষাণের বাড়তি মজুরি ও পর্যাপ্ত কৃষাণ সংকটের কারণে বৃষ্টি-বাদলের আগে গোলায় ধান তোলা নিয়ে অনেকেই রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

কৃষক ঝড় বৃষ্টির দুশ্চিন্তায় থাকলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে আপাতত ঝড় বৃষ্টির  আশঙ্কা নেই। আজ রবিবার (২৫ এপ্রিল) খুলনার তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি বছরে খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। আর গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগসহ ময়মনসিংহ ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ভাবে ৫৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে এ মৌসুমে কৃষকরা ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। হাইব্রিড চালের গড় ফলন হয়েছে ৪.৮ শতাংশ এবং উফশি চালের ফলন হয়েছে ৩.৮৫ শতাংশ।

তিনি আরো জানান, মোট আবাদ হওয়া ধানের ৫৬ শতাংশ ধান কৃষক এখন পর্যন্ত ঘরে তুলতে পেরেছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা বড় ধরনের কোনো রোগ-বালাই না থাকায় এবারে ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে সম্পূর্ণ ধান কৃষকের গোলায় উঠতে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত সময় লাগবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!