খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

পাইকগাছার বদ্ধ নদীতে লবণ পানি উত্তোলন, ইজারাদার-গ্রামবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আলোচিত মিনহাজ বদ্ধ নদীতে লবণ পানি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও ইজারাদারদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইজারাদারদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় একটি পক্ষ চাইছেন স্লুইচ গেট দিয়ে লবণ পানির অনুপ্রবেশ করাতে। অন্যদিকে কৃষি জমির ক্ষতির আশংকায় অন্য পক্ষ চাইছেন লবণ পানির উত্তোলন বন্ধ করতে।

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইজারাদার পক্ষ শনিবার (১৬ এপ্রিল) নদীতে লবণ পানি উত্তোলন করতে গেলে স্থানীয়রা এতে বাঁধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যেকোন সময় সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক সমস্যা সমাধানে পাউবো কর্মকর্তারা স্থানীয়দের সাথে মত বিনিময় করেছেন বলে জানানো হয়েছে।

জানাগেছে, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে উপজেলার গড়ইখালী, লস্কর ও চাঁদখালী ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী মিনহাজ বদ্ধ নদী। ২শ’ ৫২ একরের প্রায় ১৭ কি:মি: দৈর্ঘের বদ্ধ নদীটি দিয়ে দু’ উপজেলার ৪৬ টি মৌজার অন্তত একশ এর বেশি গ্রামের পানি নিষ্কাশিত হয়। পাশাপাশি কৃষি কাজসহ মৎস্য চাষেও এলাকাবাসী ঐ নদীর পানি ব্যবহার করে আসছেন।

এদিকে বদ্ধ নদীটি ৬ বছরের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মাছ চাষের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ২৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক ইজারা চুক্তিতে এলাকার বন্ধন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি উক্ত জলমহলটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ইজারার মেয়াদ এখনো ২ বছর বহাল রয়েছে। এমন অবস্থায় চলতি বছরের শুরুতেই এলাকাবাসীর দাবির মুখে স্থানীয় এমপি খুলনা-৬ আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু ও উপজেলা প্রশাসন গোটা উপজেলায় লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ রাখতে ঘোষণা বাস্তবায়নে মিনহাজ নদীর স্লুইচ গেটটিও বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে খানিকটা দেরীতে হলেও নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলার বিস্তীর্ণএলাকায় লবণ পানি উত্তোলনপূর্বক শুরু হয় পুরোদমে চিংড়ি চাষ। যার ধারাবাহিকতায় ইজারাদারা বন্ধন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিসহ এলাকার একটি অংশের মানুষ স্লুইচ গেটটি দিয়ে নদীতে পানি উত্তোলন করতে তৎপরতা শুরু করে। মৌসুমের শুরু থেকে গেটটি বন্ধ থাকায় নদীটি প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলহাজ্ব অহেদুজ্জামান খোকন।

তবে এলাকাবাসী বলছেন ভিন্ন কথা, নদীটি তারা ইজারা নেওয়ার পর থেকে অপরিকল্পিত উপায়ে ইচ্ছামত পানি ওঠা-নামা করায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে হাজার হাজার হেক্টর ধান, তরমুজসহ ফসলী জমির চরম ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। এই মূহুর্তে নদীতে লবণ পানি উত্তোলন করলে নদীর ধারের কৃষি ফসল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলেও দাবি তাদের।

স্থানীয়দের দাবি যতদ্রুত সম্ভব নদীটি খননপূর্বক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা। অন্যথায় অপরিকল্পিত উপায়ে নদীতে পানি তুললে ফসল, গবাদি পশুর পাশাপাশি তাদের ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ারও আশংকা রয়েছে।

উপজেলার লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, নদীতে কখন পানি উঠবে কিংবা উঠবেনা তা নির্ধারন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় জনস্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পাউবো যথাযথ সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু মিষ্টি পানির পক্ষের মানুষ হিসেবে নিজের অবস্থানের কথা জানান দিয়ে বলেন, তিনি কখনো লবণ পানির পক্ষে ছিলেন না। এজন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে গ্রামবাসীর পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।

কানাখালী গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি বলেন, ইজারাদার কর্তৃক অপরিকল্পিত ভাবে জোয়ার ওঠানোর ফলে নদীর মুখে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির মৌসুমে পানি নিস্কাশনে বাধাগ্রস্থ হয়। ফসলহানী হচ্ছে হাজার হজার বিঘা জমির। কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নদীর মিষ্টি পানি ব্যবহার করে শীত ও শুষ্ক মৌসুমে তরমুজসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করছে।

মিনহাজ চকের বসিন্দা মনিরুজ্জামান মনি বলেন, গত বৃষ্টি মৌসুমে মিনহাজ নদীর মুখ ভরাট হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গোয়ালবাড়িয়া চকের বিজন মন্ডল বলেন, নদীর ইজারাদাররা স্লুইচ গেটের যথেচ্ছা ব্যবহার করে জোয়ার উঠানোর কারণে পলি জমে নদীর মুখে প্রায় ২০০ বিঘা নদী ভরাট হয়ে গেছে।

মিনহাজ চক গ্রামের শিক্ষক গোবিন্দ মন্ডল বলেন, লস্কর, চাঁদখালী, গড়ইখালী ও কয়ার উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বৃষ্টির পনি নিষ্কাশন হয় এ নদী দিয়ে।

চাঁদখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস বলেন, কপোতাক্ষ নদ ভরাট হওয়ায় এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মিনহাজ নদী। নদীর মিষ্টি পানিতেই কৃষকেরা ফসল ফলায়। এ মূহুর্তে নদীতে লবণ পানি উঠানো হলে ফসলের ক্ষতি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কতিপয় ঘের ব্যাসায়ী ছাড়া কেউ লবণ পানির পক্ষে নয়।

ইজারা গ্রহীতা বন্ধন মৎসজীবী সমবায় সমিতির সম্পাদক বিধান রায় জানান, নদী থেকে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলার কারণে নদীর পানি একেবারেই কমে গেছে। যার প্রেক্ষিতে পাউবোর কাছে তারা জোয়ারের পানি উঠানোর জন্য আবেদন করেছিলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার জানান, সরকার বদ্ধ জলমহলটিতে বদ্ধ উপায়ে মাছ চাষের জন্য ইজারা দিয়েছেন। সেখানে সাধারণের ক্ষতি করে কোনভাবেই লবণ পানি উঠানো যাবেনা। খবর পেয়ে তিনি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক স্থানীয়দের মতামত নিয়েছেন। পানি উঠানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!