গত ৯ বছর ধরে ওরা আমাদের জমি গায়ের জোরে দখল করে রেখেছিল। আমাদের জমি চাষ করতে দেয়নি ওরা। আমরা জমিতে গেলে ওরা হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়তো। খুন-জখমের হুমকি দিতো। বাঁধা দিলে ওরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালাতো। এখনো সেই ভাংচুরের ক্ষত রয়ে গেছে।
স্থানীয় এক ইউপি মেম্বরসহ বেশ কয়েকজনের দখল থেকে দীর্ঘ ৯ বছর পর নিজেদের জমি ফিরে পেয়ে ধান চাষ করতে পেরে এমন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম একসরা গ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে গ্রামবাসি তাদের জমিতে চলতি আমন মৌসুমের ধান চাষ শুরু করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান বলেন, মধ্যম একসরা বিলে আমার সাড়ে ১১ বিঘা জমি জোরপূর্বক সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গত ৯ বছর ধরে দখল করে খেয়েছে মধ্যম একসরা গ্রামের নূর ইসলাম সানার ছেলে ইউপি মেম্বর শওকত আলী, আছির শিকারীর ছেলে দলিল শিকারী, মরহুম বেলায়েত শিকারীর ছেলে আবু সাদেক শিকারী, মরহুম মোকছেদ সানার ছেলে আবু হাসান সানা, মইজুদ্দিন গাজীর ছেলে দাউদ গাজী, মরহুম সামাদ কারিকরের ছেলে সালাম কারিকর, জমাত গাজীর ছেলে সাইদ গাজীসহ ১৫/১৬ জন। প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাইনি।
কোন বুনিয়াদে তারা দখল করতো জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান বলেন, ওদের কোন প্রকার কাগজপত্র নেই। শুধু সরকারি দলের কিছু লোকের ছত্রছায়ায় সম্পূর্ণ গায়ের জোরে খুন-জখমের ভয় দেখিয়ে ৯টি বছর আমাদের জমি ভোগ দখল করে রেখেছিল। গত ২৮ আগস্ট আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ গোলাম কবির উভয়পক্ষকে ডেকে বসাবসি করেন। সেখানে ওরা কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এবং আমরা বৈধ কাগজপত্র থানার ওসি আমাদের জমি চাষ করার অনুমতি দেন। একই সাথে ওদের জমিতে যেতে নিষেধ করেন।
একই গ্রামের রোকনুজ্জামান বলেন, আমার মাত্র একবিঘা জমি রয়েছে বিলে। সেই জমিটুকুও ওরা ৯ বছর অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। প্রতিবাদ করতে গেলেই ওরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হায়েনার মতো আক্রমণ করতো। আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করতো। লুটপাট চালাতো। নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতন করতো। দীর্ঘ ৯ বছর পর আমরা জমি চাষ করতে পারছি পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে বলে।
আনুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, মধ্যম একসরা বিলে প্রায় ১০০ বিঘা খাস জমি ও ৩০ বিঘা ব্যক্তি মালিকানা জমি সরকারি দলের লোক পরিচয়ে দীর্ঘ ৯বছর ধরে ওরা দখল করে খেয়েছে। অথচ ১৯৭৫ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রায় ৪৫ বছর সরকারি রাজস্ব ও ভ্যাট দিয়ে গ্রামের মানুষ ডিসিআর নিয়ে আসছে। কিন্তু ৯টি বছর ধরে তারা ফসল ফলাতে পারছিল না। এতে গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, অবৈধভাবে জমি দখলের প্রতিবাদ করায় আমার বাড়িঘর দফায় দফায় ভাংচুর করেছে ওরা। আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। মিথ্যে মামলার আসামী করা হয়েছে। আমার উপর হামলা চালানো হয়েছে। আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ গত ২৮ আগস্ট থানায় বসাবসি করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যে ভূমিকা পালন করেছেন তাতে গ্রামের মানুষ তাদের অধিকার ও জমি ফিরে পেয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহকালে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সেখানে হাজির হন একসরা গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে আবু হাসান সানাসহ ৭/৮ জন। তারা বলেন, আমরা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। আমরা সরকারি দল করি। জমি আমরা চাষ করবো না তো চাষ করবে কী বাইরের লোক? আমরা ৯ বছর ধরে জমি দখল করে খাচ্ছি। সেই জমি এবার গ্রামের লোক দখল করেছে।
জমির কাগজপত্র আছে কীনা জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকারি জমি সরকারি দলের লোক দখল করবে। তাতে কাগজপত্র লাগবে কেন?
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ গোলাম কবিরের সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
খুলনা গেজেট/এনএম