রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে অপহরণের নাটক সাজানোর দাবি করে জবানবন্দি দিয়েছেন তার ছেলে মোহাম্মদ মিরাজ আল শাদী। সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাতে খুলনা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজকে রহিমা বেগমের ছেলে কার্যালয়ে এসেছিলেন। সে স্বেচ্ছায় বলেছে আমি একটি জবানবন্দী দিতে চাই। তার মা যাদেরকে পেচিয়ে বা জমিজমা সংক্রান্ত যে বিরোধ মায়ের আত্মগোপনের পেছনে তাদের কোন হাত নেই। এরা জড়িত না, নির্দোষ। আমরা তখন তাকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়ে দেই। সংশ্লিষ্ট আদালতে সে একটি জবানবন্দী দিয়েছে।
তিনি বলেন, মিরাজ আমাদের জানিয়েছেন আমার মা আত্মগোপন করেছে। এর আগেও একাধিকবার সে এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার বাবার সাথে ঝগড়া করে। আর এবার জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধীদেরকে ফাঁসানোর জন্য সে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছে এবং তার আত্মগোপনের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমি যখন মহেশ্বরপাশায় যেয়ে দেখি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা সবাই যার যার বাসায় আছে। তাদেরকেসহ আমি আমার মাকে খুঁজি। এর মানে ক্লিয়ার যে, তিনি স্বেচ্ছায় গেছেন। তার জবানবন্দী আইনানুযায়ী আদালতে রেকর্ড হয়েছে।
আরও পড়ুন : রহিমা বেগম ফের নিখোঁজের গুঞ্জনে যা বললেন মেয়ে আদুরী
পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, চলতি মাসে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কিছু রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। যার মধ্যে নিখোঁজের আধাঘন্টা আগে রহিমা বেগমের বিকাশে টাকা এসেছিল। এই ঢাকা কোথা থেকে এসেছিল আর কেনই এসেছিল। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান বলেন, আমি ঢাকায় রয়েছি। ফের মা নিখোঁজের বিষয়ে কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমার ভাই মিরাজ অথবা বোন আদুরীর সাথে কথা বলতে পারেন।
এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের একটি টিম শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে দৌলতপুর থানায় পৌঁছায়। পরে রোববার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ রহিমা বেগমকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে। পরেরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রহিমা বেগমকে (৫২) তার ছোট মেয়ে আদরী খাতুনের জিম্মায় দেন আদালত। পরে খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকায় আদরীর বাসায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আল আমিনের কাছে জবানবন্দি দেন রহিমা বেগম।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়-স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।
রহিমার ছয় সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনও করেছেন।
পুলিশ জানায়, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন- এ অভিযোগ তুলে তার মেয়ে আদরী খাতুন বাদী হয়ে পরদিন দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।