অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ভৈরব নদীর ওপার ফেরিঘাট থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সিংগাড়ী পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার কার্পেটিং দ্বারা নির্মিত পিচের রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে জনগণের দূর্ভোগের যেন সীমা নেই।
সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের দিকে এই রাস্তাটি প্রথম কার্পেটিং দ্বারা নির্মাণ করে পাকা করা হয়। রাস্তাটি ব্যবহারের ফলে চলাচলের অনুপযুক্ত হলে দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালে সংস্কার করা হয়। ২/৩ বছর আগে থেকে রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং এর খোয়া গুলো উঠে গেছে। ফলে রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে নওয়াপাড়া থেকে নড়াইল সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে হাজার হাজার মানুষ। প্রায় ছোট-বড় দুঘর্টনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। পিচের রাস্তার কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও পিচের পরে ইটের সোলিং বুনে সাময়িক ভাবে চলাচল করছে পথচারীরা। বেশ কিছু দিন ধরে রাস্তাটির অবস্থা বেহাল হয়ে থাকলেও কতৃপক্ষের কোনো মাথাব্যাথা নেই এমন অভিযোগ পথচারীদের মুখে শোনা যায়।
স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেন, এলজিইডি’র রাস্তা এজন্যে কিছু করার নেই চেয়ারম্যানদের। প্রায়ই এই রাস্তায় চলাচলের সময় সড়ক দুঘর্টনার শিকার হয় অনেক সাধারন যাত্রীরা। রাস্তাটির দিকে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেন তিনি।
এ রাস্তায় ভ্যানচালায় আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, রাস্তাটি বেশ কিছুদিন ধরে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়েছে। কয়েকবার অফিসাররা এসে রাস্তাটি মেপে নিয়ে গেছে, কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। জীবনের ঝুকি নিয়ে এই রাস্তায় জীবিকার তাগিদে ভ্যান চালাই। রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় রোজগার আর আগের মতো ভালো হয় না। সারাদিন যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে চাল বাজার করতে পারি না, যার ফলে অনেক দিন দু’ এক বার না খেয়েও দিন পার করতে হয়।
পাচুড়িয়া গ্রামের নিজাম ফকির বলেন, কয়েকজন অফিসাররা এসে রাস্তাটি মেপে নিয়ে গেল। পরে শুনলাম নতুন বছরের জানুয়ারী মাসে রাস্তাটির কাজ শুরু হবে। তারপর থেকে তিন বছর গত হয়ে গেলো, কিন্তু কোনো জানুয়ারী মাসে কাজ হলো না। রাস্তাটির কিছু কিছু জায়গায় এত খারাপ গভবর্তী কোনো মহিলাকে এই রাস্তা দিয়ে ডেলিভারীর জন্যে হাসপাতালে নেওয়ার সময় অনেকে সমস্যায় পড়তে হয়। গ্রামের সাধারন মানুষের দাবী রাস্তাটির কাজ দ্রুত সংস্কার করে সমাধান করা হোক।
নওয়াপাড়া ফেরিঘাট থেকে সিংগাড়ী হয়ে নড়াইলের জেলার সদর, কালিয়া উপজেলা সহ অভয়নগরের চাকই, রুখালী, খড়েলা, মির্জা পুর, সিংগাড়ী, বাঘুটিয়া, পাচুড়িয়া, আমতলা ও ফুলতলা হয়ে খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার একমাত্র পথ হিসেবে এই রাস্তাটি ব্যবহার করে সাধারন যাত্রীরা। এই রাস্তাটির পাশ্বে আশা ব্রিকস, তাজ ব্রিক্য্রস্, সোনালী ব্রিকস, ফজলু ব্রিকস ও রহমান ব্রিকস এর বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ট্রাক-ট্রলি, পিকাপ, ভ্যান মাটি ও ইট নিয়ে যাতায়াত করে যার ফলে রাস্তাটি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
রাস্তা সংলগ্ন সিংগাড়ী অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব মডেল কলেজ, সিংগাড়ী ১০শর্য্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াতের সময় পড়ছে চরম বিপাকে। রয়েছে সিংগাড়ী বাজার, ইছামতি বাজার, চাকই বাজার, ভাটপাড়া বাজার, নাউলি বাজার, শংকরপাশা বাজার, হিদিয়া বাজার, বাশুয়াড়ি বাজার সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় বাজার। এই সমস্ত বাজারে যাতায়াতের জন্যে ঐ এলাকার মানুষ রাস্তাটি ব্যবহার করে। রাস্তার দুই পাশ্বে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ এবং মন্দির।
উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, ঐ রাস্তাটির টেন্ডার অন গোয়িং প্রসের্স (নতুন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায়) অবস্থায় রয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই সংস্কারকাজ শুরু হবে।
খুলনা গেজেট/কেএম