‘দমনপীড়ন করে বিএনপিকে দমানো যাবে না’ হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গতকাল থেকে আমাদের নতুন করে গ্রামপর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে। গোটা দেশের মানুষ দেখছে, মানুষ কীভাবে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলাতে কিন্তু বড় বড় মিছিল হয়েছে। এর মধ্যেও তারা কেউ থেমে নেই।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ-র্যাব কর্তৃক গুম-খুন-ক্রসফায়ারে হতাহত নেতাকর্মীদের পরিবারকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। ভোলা, ফেনী, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৪ জন নেতাকর্মীর পরিবারকে এককালীন ও শিক্ষাবৃত্তির আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ৯ বছরে সারা দেশে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী হেল্প লাইন।
গতকাল লক্ষ্মীপুরে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাড়িতে আক্রমণ করেছে, বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের নেতাদেরকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সমস্যাটা ওই জায়গায় শেখ হাসিনার, আওয়ামী লীগের। এত নির্যাতন, এত নিপীড়ন, এত হত্যা, এত গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে- এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় তাদের রাগের কারণ, ভয়ের কারণ।
তিনি আরও বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তারা (সরকার) বাইরে চিকিৎসা করাতে দিতে চায় না। বিরোধিতা করে। কেনো? যদি তিনি বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান সাহেব যদি দেশে আসেন, তাহলে এখানে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে-এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না। আমরা যারা দেশে আছি আমরাও তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে কিন্তু এখন জেগে উঠছি। জেগে উঠতে হবে- বিকল্প নেই আমাদের কাছে। এই জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই দানবকে উপড়ে ফেলে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার পরিবারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কথা আমরা দিতে পারি যে, আমরা যদি এই সরকারকে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, একটা সত্যিকারের জনগণের পার্লামেন্ট আনতে পারি, তাহলে আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের সকলের পুনর্বাসনের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, ভিক্টিম হয়েছেন, অবশ্যই তাদের সকল প্রকার রাষ্ট্রের সিষ্টেমের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এতটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই- আমরা নূরে আলম ও আব্দুর রহিমের পরিবারের জন্য ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি; তারা যেন বাকি জীবনটা চালাতে পারে, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা আমরা করব।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা বড়াই করছে- দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া বানিয়ে দিয়েছে। আর এদিকে চা শ্রমিকেরা ১২০ টাকা প্রতিদিন পায়। তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে। ওদিকে শতকরা ৪২ জন মানুষের জীবন দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। দুই বেলা খেতে পায় না। কিছুক্ষণ আগে মোবাইলে দেখলাম একজন চা শ্রমিক নেতা বক্তৃতায় তাদের খাবারের হিসাব দিচ্ছেন। সকালে একটা রুটি চা দিয়ে ডুবিয়ে, দুপুরে রুটি এবং রাতে একটু ভাত আর ডাল অথবা একটু সবজি খায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের দেশে শ্রমিকদের এই অবস্থা। তারপরে তারা বলেন, আমরা নাকি তাদের উন্নয়ন দেখতে পাই না। আওয়ামী লীগের যতজন মানুষ আছেন, আপনারা জনগণের পকেট করে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন।
জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য যুব দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে এবং হেল্প সেলের সদস্য মামুন খান, ফয়সাল আহমেদ ও নাসির উদ্দিন শাওনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পারভেজ রেজা কাকন, হেল্প সেলের সুমন আহসান, ওবায়দুর রহমান, কাজী এমদাদুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম রাসেল, এমদাদুল হক লিমন বক্তব্য দেন।