বিগত ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট দেশের ৬৩ জেলার মধ্যে সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে জেএমবি’র বোমা হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত ছয়টি মামলার যুক্তিতর্ক মঙ্গলবার (০৯ (ফেব্র“য়ারি) শেষ হয়েছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে আসামীপক্ষের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিজ নিজ পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। পরে বিচারক শরিফুল ইসলাম আগামিকাল ১০ ফেব্র“য়ারি বুধবার রায় এর জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন ৬টি মামলার আসামী মনিরুজ্জামান মুন্না, বিল্লাল হোসেন, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান লিটন, শামীম হোসেন গালিব, হাবিবুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, আনিসুর রহমান খোকন ও মিন্টু সহ সকল জামিনপ্রাপ্ত এবং জেলহাজতে আটক আসামী।
রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন জজ আদালতের পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ। তাকে সহায়তা করেন অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. আব্দুস সামাদ। এসময় তারা বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমান এবং আলামত জব্দের মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয় এ মামলার সকলেই দোষী। তিনি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন।
অপরদিকে আসামীপক্ষে ছিলেন এ্যাড. জিএম আবুবকর সিদ্দীক। তিনি আইনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে ৩, ৪, ৬ ধারা প্রযোজ্য নয়। ন্যায়বিচার হলে সকল আসামী খালাস পাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিরিজ বোমার পাঁচটির প্রতিটি মামলায়তদন্ত শেষে ১৯ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দেওয়া হয়। চার্জশীটভুক্ত এই ১৯ আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত নয়জন কারাগারে, ছয়জন জামিনে এবং চারজন এখনও পলাতক রয়েছে। তবে ২০০৭ সালে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ এর দায়েরকৃত মামলায় পূর্বের মামলার আসামীসহ আরো চার জনের নামে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ইসলামসপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিস্কের রক্ষক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান। আসামীরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় মামলার রায় হতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লেগে যায়। তবে মঙ্গলবার জেলখানা থেকে নয়জনকে আদালতে আনা হয়। ১০জন জামিনে থেকে আদালতে হাজিরা দেন। পলাতক রয়েছে সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের ফখরুদ্দিন রাজি, সাতক্ষীরা সদরের সাতানি গ্রামের আবুল খায়ের, কলারোয়ার পাটুলি গ্রামের নাঈমুদ্দিন। যুক্তিতর্ক শেষে জামিনে থাকা ১০ জনের মধ্যে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মমতাজউদ্দিন ও নূর আলী মেম্বর ব্যতীত আট জনের জামিন বাতিল করে মোট ১৭জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ জানান, ২০০৫ এর ১৭ আগস্ট শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়সহ পাঁচটি স্থানে একযোগে এই বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের দলিলউদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাকাল ইসলামপুর চরের রওশানের দেয়া বিবরণ মতে ধরা পড়ে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাটি চিহ্নিত করা হয়। এই সূত্র ধরে ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ মোট ১৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) এ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা। পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায়।
২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি সবগুলি মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। সে বছরই মামলাগুলি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয়। যথা সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭ এর ২৫ জুন মামলাগুলি খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরায়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলা গুলির বিচার কাজ শুরু করেন। সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলাটিও ২০০৮ সালে বিচার শুরু হয়। আসামিদের মধ্যে শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ।
খুলনা গেজেট/ টি আই