খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
  আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ঋষভ পন্ত

দু’হাজার বছর আগেও ছিল ‘কম্পিউটার’!

গেজেট ডেস্ক

১৯০০ সাল। গ্রিসের সিমি দ্বীপের এক দল স্পঞ্জ সংগ্রহকারী ডুবুরি অ্যান্টিকিথেরা দ্বীপের কাছে সমুদ্রের ৪৫ মিটার গভীরে ডুবে থাকা এক প্রাচীন রোমান জাহাজের সন্ধান পান। সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু দামি প্রত্নবস্তু। যার মধ্যে ছিল ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের মূর্তি, রঙিন পাত্র, কাচের সরঞ্জাম, গয়না, প্রাচীন মুদ্রা ইত্যাদি। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় এক রহস্যময় বস্তু। সেটি যে ঠিক কী, তা সেই ডুবুরিরা বুঝতে পারেননি।

প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ইতিহাস চর্চাকারীরা জানান যে, সেই জাহাজটি রোডস থেকে রোমের দিকে যাচ্ছিল এবং সম্ভবত এতে বোঝাই সামগ্রীগুলি ছিল রোমানদের দ্বারা লুন্ঠিত। অনুমান, রোমান সেনাপতি সুল্লা (১৩৮-৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই সামগ্রীগুলি লুঠ করে ইটালির দিকে পাঠাচ্ছিলেন।

পানি থেকে তুলে আনা সমগ্রীর মধ্যে প্রাপ্ত রহস্যময় বস্তুটি যে একটি যন্ত্র, সেটা উদ্ধারকারীরা বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার প্রকৃত চরিত্র বুঝতে পারেননি তাঁরা। তাই সেই বস্তুর ঠাঁই হয় এক সংগ্রশালায়।

১৯০২ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ ভ্যালেরিয়াস স্টাইস লক্ষ করেন, উদ্ধার করা বস্তুটির গায়ে একটি গিয়ার-হুইলের মতো জিনিস রয়েছে। তিনি সেটিকে জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত কোনও যন্ত্র বা ঘড়ি বলে বর্ণনা করেন।

১৯৫১ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ডেরেক জে ডি সোল্লা প্রাইস প্রত্নবস্তুটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে প্রাইস ও নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের বিশেষজ্ঞ শারাল্যাম্পোস কারাকালোস বস্তুটির এক্স রে এবং গামা রে প্রতিচ্ছবি তৈরি করেন। বস্তুটির ৮২টি অংশের এমন প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয়।

সেই সময়েও বোঝা যায়নি, যন্ত্রটি ঠিক কী কাজের জন্য নির্মিত হয়েছিল। বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা নিরন্তর লেগে থাকেন যন্ত্রটির রহস্য উদ্ঘাটনের কাজে। ২০০৮ সালে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্তে আসেন, যন্ত্রটি করিন্থে নির্মিত। প্রাচীন কালে করিন্থের উপনিবেশ ছিল সাইরাকিউজ। এবং বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক আর্কিমিডিস ছিলেন সাইরাকিউজের লোক। অনুমান করা হতে থাকে যন্ত্রটির সঙ্গে আর্কিমিডিসের ঘরানার কোনও যোগাযোগ থাকা সম্ভব।

২০১৪ থেকে ২০১৭-এর মধ্যে বিস্তারিত গবেষণা চলে যন্ত্রটিকে নিয়ে। তার মধ্যে গ্রিক ত্রিকোণমিতির প্রয়োগও লক্ষ করেন গবেষকরা। অনুমান করা হতে থাকে, এটি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার একটি জটিল যন্ত্র। গবেষণা গড়াতে থাকে ২০২০ সালেও।

২০২১-এ বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যান্টিকিথেরা থেকে প্রাপ্ত যন্ত্রটি আসলে একটি ‘অ্যানালগ কম্পিউটার’, যার কাজ ছিল ব্রহ্মাণ্ডের চরিত্র উদ্ঘাটন। ২০০০ বছর আগে গ্রিকরা সৌরজগতের পাঁচটি মাত্র গ্রহের অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। এই যন্ত্রে সেই পাঁচটি গ্রহের গতিবিধি নির্ণয়ের ব্যবস্থা ছিল।

২০২১ সালে যন্ত্রটির কিছু অংশের আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লণ্ডন-এর গবেষকরা সেই অসাধ্যসাধনটি করে দেখান। বিভিন্ন গিয়ার-হুইল দ্বারা চালিত এই যন্ত্রে সূর্য, চাঁদ, বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনি গ্রহের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা যেত বলে তাঁরা জানান।

প্রাচীন গ্রিসে মনে করা হত, সূর্য-চন্দ্র সহ বাকি গ্রহগুলিও পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই যন্ত্র সূর্য-সহ গ্রহগুলির গতিপথ পৃথিবী কেন্দ্রিক হিসেবেই দেখিয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, ‘অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম’ সে যুগের নিরিখে অতিরিক্ত মাত্রায় সূক্ষ্ম হিসেব করতে সমর্থ ছিল। হাতে তৈরি গিয়ার-হুইল দিয়ে যে এমন যন্ত্রগণক তৈরি সম্ভব, তার উদাহরণ প্রাচীন পৃথিবীতে তেমন নেই বললেই চলে।

কারা তৈরি করেছিলেন এমন একটি যন্ত্র? কী হত এ থেকে প্রাপ্ত হিসেব-নিকেশ দিয়ে? এই সব প্রশ্নের উত্তর অজানা থেকে গিয়েছে। তবে, এই ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে ‘অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম’-কে প্রযুক্তির ইতিহাসে প্রাচীনতম ‘কম্পিউটার’ বলতে দ্বিধা করছেন না বিজ্ঞানীরা।

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!