দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পড়েছে খুলনাবাসীর বহু প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। সিডিউল অনুযায়ী কাজ হলে ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতো। সেখানে কাজ শুরুর পর ১৮ মাসে অগ্রগতি মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ। যদিও ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজের সময়সীমা ২০২৪ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।
২০০১ সালের ২২ এপ্রিল খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে প্রয়াত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার দেড় যুগ পর ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। অনুমোদনের পর প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করতে সময় লেগে যায় এক বছর। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৫ মাস পর ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সামনে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। কাজ শুরুর ১৫ মাস পর গত ১ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)’র নিকট দিঘলিয়া প্রান্তের ১০ দশমিক ৩৭৬৭ একর অধিগ্রহণকৃত ভূমির দলিল হস্তান্তর করে। এর ২৮ দিন পর অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও ভূমি অধিগ্রহণের ৪ মাস পরও অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে গাছপালা এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। সেতুর কাজে প্রত্যাশিত গতি না আসা এটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা বলছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলেও শহরাংশ রেলিগেট হতে মুহসিন মোড় পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ এখনো সম্পন্ন হয়নি। এই অংশে ২ দশমিক ৫১ একর ভূমির জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কাছে ১২ কোটি টাকা দাবি করেছে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা রেলওয়ের ভূমি বাবদ এবং বাকী ২ কোটি টাকা রেলিগেট হতে মুহসিন মোড় পর্যন্ত রেলওয়ের জায়গা লিজ নেওয়া ব্যবসা পরিচালনাকারীদের স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ। এছাড়া একই অংশের ৪ দশমিক ৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য গত ৩০ অক্টোবর খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ভূমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক কার্যক্রম হিসেবে ৪ ধারা নোটিশ প্রদান করা হলেও এ কার্যক্রম আর এগোয়নি।
এছাড়া ভৈরব সেতু এলাকার রাস্তার পাশের বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন/পোল অপসারণ বাবদ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ২, ৩ খুলনা, ওজোপাডিকোকে বছর পূর্বে প্রকল্প হতে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হলেও তারা এখনো বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন এবং পোল স্থানান্তর করেনি।
সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ইতিমধ্যে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজর সময়সীমা ২০২৪ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়সীমা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকল্পের ব্যয়ও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
ভৈরব সেতুর কাজের অগ্রগতি বলতে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ২৪, ২৫ এবং শহরাংশের রেলিগেট প্রান্তে ১৩ নং পিয়ারের কিছু অংশ দৃশ্যমান। রেলিগেট প্রান্তে ১৪ নং পিয়ারের পাইল ক্যাপ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে এবং দিঘলিয়া প্রান্তে ২১ নং পিয়ারের কাজ শুরু। যা মোট কাজের সাড়ে ৪ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান শুরু থেকে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েও ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজে প্রত্যাশিত অগ্রগতি আনায়ন করতে পারছেন না। গত ৬ নভেম্বর তিনি সরেজমিনে সেতু এলাকা পরিদর্শন করেন। এছাড়া গত ২১ নভেম্বর তিনি সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রীকে সেতুর উপরোক্ত সকল সমস্যা সমাধানপূর্বক সেতুর কাজে দ্রুত গতি আনায়নের জন্য ডিও লেটার প্রদান করেন। যার নং ২০২২-৯১ তাং ২১/১১/২০২২ ইং।
প্রসঙ্গত ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬’শ ১৭ কোটি টাকা ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে।
ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এরমধ্যে শহরাংশ অর্থাৎ নগরীর মুহসিন মোড় হতে রেলিগেট নদীর তীর পর্যন্ত ১থেকে ১৪ নং পিয়ার বসবে। ১৭ থকে ২৮ নং পিয়ার বসবে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড